রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৮ অপরাহ্ন

এক যুগে চট্টগ্রাম বন্দরে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে : চেয়ারম্যান

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আওতায় কক্সবাজার মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে হ্যান্ডলিং করা যাবে ১ লাখ টন ওজনের পণ্যবাহী কার্গো এবং ১০ হাজার টিইইউস কনটেইনারবাহী জাহাজ।

তিনি বলেন, অক্টোবরে শুরু হচ্ছে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। প্রকল্প শেষ হলে সেখানে ভিড়বে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। কর্ণফুলী চ্যানেল অর্থাৎ বর্তমান বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা যায়। কিছু কাজ করা হলে এখানে ভিড়বে সাড়ে ১১ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ। সবমিলিয়ে সিঙ্গাপুর বন্দরের মতো আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জাতির সম্পদ। বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একসময় বন্দর সদরঘাট ও আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত ছিল। বর্তমানে সম্প্রসারিত হতে হতে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেছে। গত এক যুগে বন্দরে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতা বৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কী কসাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজন উল্লেখযোগ্য। আমাদের এখন লক্ষ্য আঞ্চলিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে তেমন প্রভাব পড়েনি। বরং বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং কম রপ্তানিতে আমাদের আয় বেড়েছে। জুন মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে। বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে কন্টেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্র-বিশেষে অন-অ্যারাইভেল বার্থিং প্রদান করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ টন । জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২৫৩ টি ।

রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে বদর কর্তৃপক্ষ। ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত তিনটি কন্টেইনার জেটি ও একটি তেল খালাসের বিশেষায়িত জেটি রয়েছে। বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ টিইইউস কন্টেইনার পরিবহন সক্ষমতা রয়েছে এই টার্মিনালের।

তিনি বলেন, ২০২২-২৩ সালে ২টি ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল কেন, ২টি ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল ক্রেন, ৬টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন ৩৪টি কিউজিসি এবং ২টি কন্টেইনারে মোভার বন্দরের বহরে যুক্ত হয়েছে। প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন বহরে যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে ১৮টি গ্যান্ট্রি ক্রেন ফ্লিটে রয়েছে। এছাড়া বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৬ লাখ বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এ ইয়ার্ডসমূহে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস থেকে ৫৩ হাজার ৫১৮- তে উন্নীত হয়েছে । লালদিয়ার চর থেকে ৫২ একর জায়গা উদ্ধার করে সেখানে কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরে কেমিক্যাল শেড তৈরি করা হচ্ছে এবং মালটিপারপাস কার শেড তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এসব পোশাকের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পোশাকবাহী জাহাজ সরাসরি এসব দেশে যেতে পারার সুযোগ না থাকায় সিঙ্গাপুর বন্দর, কলম্বো বন্দর ও পোর্ট ক্যালাং হয়ে যেত। ফলে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগত। চট্টগ্রাম বন্দর এ অসুবিধা দূর করতে শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি জাহাজ চলাচল চালুর তাগিদ দেয়। বিশেষ হ্যান্ডলিং ও বার্থিং সুবিধা দেওয়ার কথাও জানায় কর্তৃপক্ষ । কর্তৃপক্ষের অনুরোধে শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ রুট চালুর উদ্যোগ নেয় । ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজ ৯৫২ টিইইউস পোশাকবাহী কনটেইনার নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর মাধ্যমে এ মাইলফলক অর্জন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।

এ সময় বন্দরের সদস্য মো. শহীদুল আলম, পরিচালক প্রশাসন মো. মমিনুর রশিদ ও সচিব মো. ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD