করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে বাংলাদেশ সরকার গার্মেন্টস সহ রপ্তানি খাতের জন্য প্রণোদনা হিসেবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিতরণের এক রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রপ্তানি শিল্পের মালিকদের প্রণোদনা পাওয়ার একমাত্র শর্ত হচ্ছে – এই টাকা দিয়ে শ্রমিকের বেতন দিতে হবে।
মালিকরা এই টাকা পাবেন দুই শতাংশ হারের সুদে ঋণ হিসাবে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বড় রপ্তানি শিল্পের জন্য এমন সুবিধা বিবেচনা করা হলেও ছোট শিল্প কারখানা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো পরিকল্পনা না থাকায় তা অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
করোনাভাইরাস দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিও মন্দার মুখে পড়তে পারে, এনিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
সেজন্য কয়েকদিন আগেই জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে সেই প্রণোদনার টাকা দেয়ার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়।
এই বৈঠকে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেনাবাহিনী প্রধান এবং রপ্তানি শিল্পসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিতি ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, অনুদান বা দান হিসাবে নয়, এই টাকা দেয়া হবে শর্তসাপেক্ষে ঋণ হিসাবে।
“এটা প্রণোদনা মানে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, এটা লোন হিসাবে দেয়া হবে রপ্তানি শিল্পকে। দুই শতাংশ হারের সুদে এই ঋণ দেয়া হবে।এবং ছয় মাস পর থেকে একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই টাকা শোধ করতে হবে।”
“এটা দান নয়, পুরোপুরিই লোন বা ঋণ। রপ্তানি খাতের মালিকরা এই টাকা পাবেন এবং এটা সুনির্দিষ্ট করেই বলা হয়েছে যে, এই টাকা শ্রমিকের বেতনের জন্যই ব্যবহার করতে হবে।”
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে শিল্প তাদের উৎপাদনের ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে, তারাই এই প্রণোদনার টাকা পাবে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, মূলত গার্মেন্টস শিল্পকে বিবেচনায় নিয়েই এ টাকা দেয়া হচ্ছে। কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত বিশ্ব-পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গার্মেন্টস মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন।
রপ্তানি শিল্পের প্রণোদনার টাকা বিতরণের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেনাবাহিনী প্রধান এবং ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গার্মন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট রুবানা হকও বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলছিলেন, শ্রমিকদের বেতন দিতে তাদের আরও অর্থের প্রয়োজন হবে।
“আমরাতো পাঁচ হাজার কোটি টাকা পুরোটা পাব না। যদি শতকরা ৮৪ ভাগ আনুপাতিক হারেও ধরেন, তাহলেও আমরা চার হাজার দুইশো কোটি পাবো। আমাদের গোটা তৈরি পোশাক খাতে কিন্তু প্রতি মাসে চার হাজার কোটি টাকা বেতন দেয়।”
রুবানা হক আরও বলেছেন, “এটা শুধু কেন সরকারের ঘাড়েই পড়বে? আমাদের সব ব্র্যান্ডরা যদি সময়মতো টাকাটা দিয়ে দিতো তাহলেওতো আমরা বাঁচতাম। আমরাতো তাদের কাছে কোনো অনুদান চাচ্ছি না। আমরা তাদের কাছে যা রপ্তানি করেছি, তার অন্তত ২৫ শতাংশ অর্থ পেলে আমরা বেতনগুলো দিতে পারতাম।”
“কারণ আগামী ছয় মাসে দেখা যাবে আমাদের আড়াইশো বা পাঁচশো কোটি ডলারের ঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখতে বাংলাদেশে এখন যে লকডাউন চলছে, রপ্তানি খাতের বাইরেও ছোট সব শিল্প কারখানা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা সবকিছুই বন্ধ হয়ে রয়েছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস এর নাজনীন আহমেদ বলছিলেন, ছোট শিল্প বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংকটটা বেশি, তাদের জন্য কোনো সহায়তার পরিকল্পনা না থাকায় অর্থনৈতিক মন্দা সামলানো কঠিন হবে।
“এই সময়ের অর্থনীতির যে মন্দাভাব, সেটি সার্বিকভাবে পুরো অর্থনীতিতেই বিরাজমান। কাজেই শুধু রপ্তানি খাতের জন্য এই সুবিধা দেয়াটা যৌক্তিক নয়। কারণ রপ্তানি খাতের সাথে জড়িতরা বড় ব্যবসাযী এবং তাদের ঝুঁকি সামলানোর সক্ষমতাও বেশি। বরং সরকারের প্রণোদনার লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল বিভিন্ন খাতের যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ছোট শিল্প” – বলে নাজনীন আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, ছোট শিল্প বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের কিভাবে সহায়তা করা যায়, তা পরে আলোচনা করে তারা পরিকল্পনা ঠিক করবেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
লাইট/এএইচ