শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

করোনার থাবা কেড়ে নিল ৩০ হাজার কোটি টাকা

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস আতঙ্কে একের পর এক বড় পতনের মুখে পড়ে দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে হারিয়েছেন। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার ফলে বিনিয়োগকারীরা এ অর্থ হারিয়েছেন। শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করা না হলে বিনিয়োগকারীদের এ ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যেত।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপকে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বিশ্ব শেয়ারবাজারে মন্দাভাব দেখা দেয়। মার্চ মাসের শুরু থেকেই যার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও। তবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের মূল ধাক্কাটা আসে ৯ মার্চ।

৮ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশের পরেই ৯ মার্চ ধসে পড়ে শেয়ারবাজার। এরপর দিন যত গড়িয়েছে পতন ততো দীর্ঘ হয়েছে। পতনের ধকল সামলাতে না পেরে লেনদেনের সময় সীমা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

সেই সঙ্গে পতনের লাগাম টানতে নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মাধ্যমে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমা ঠেকানো হয়।

এরপরও করোনার প্রকোপে মার্চ মাসে লেনদেন হওয়া ১৮ কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীরা ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে হারিয়েছেন। অবশ্য বিএসইসির নতুন সার্কিট ব্রেকারের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছে। নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করা না হলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যেত।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, যা ২৫ মার্চ লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৩ লাখ ১২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এরপর আর লেনদেন হয়নি। মার্চ মাসে আর লেনদনও হবে না। এ হিসাবে মার্চ মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ওই পরিমাণ কমেছে।

২৫ মার্চ লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ লাখ ১২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকায় দাঁড়ালেও করোনার প্রকোপে টানা পতনের কবলে পড়ে ১৮ মার্চ ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। এরপর ১৯ মার্চ নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করে বিএসইসি।

নতুন সার্কিট ব্রেকারের কারণে ওই দিন লেনদেন শুরুর আগেই প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বন্ধ দরপতন। ফলে নতুন নিয়ম করে বিএসইসি একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে, অন্যদিকে ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার লোকসান কমিয়ে দিয়েছে। নতুন নিয়ম না করে যদি ১৮ মার্চ শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হতো তাহলেও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ অর্ধলাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারী যখন দিশেহারা সেই মুহূর্তে সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ একটি শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট দামের নিচে নামতে পারবে না। এর মাধ্যমে বাজারে শেয়ারের দাম ফ্রি-ফল বন্ধ হয়েছে এবং লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী স্বস্তিতে আছেন। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং সঠিক।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তন আনা না হলে এতোদিন হয় তো বিনিয়োগকারীরা লক্ষ কোটি টাকার ওপরে হারাতেন। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের লোকসান কমানো গেলেও লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নেই। নতুন সার্কিট ব্রেকারের কারণে হয়তো কিছুদিন দরপতন ঠেকানো যাবে। কিন্তু কিছুদিন দাম বাড়ার পর, পতন শুরু হলে সেই পতন তো ঠেকানো যাবে না। কারণ ফ্লোর প্রাইসের নিচে দাম যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও, দাম বাড়ার পর আবার কমে ফ্লোর প্রাইস পর্যন্ত আসার সুযোগ আছে।

সূচক
মার্চ মাসের শেষ কার্যদিবস বা ২৫ মার্চ লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ৪ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে। অর্থাৎ মার্চ মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪৭২ পয়েন্ট।

অবশ্য ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করা না হলে এ পতনের মাত্রা অনেক বড় হতো। কারণ ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করার আগের দিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ৩ হাজার ৬০৩ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ মার্চের প্রথম ১৩ কার্যদিবসেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৮৭৭ পয়েন্ট কমে গিয়েছিল।

সেখান থেকে নতুন সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে একদিকে যেমন পতন ঠেকানো হয়েছে, সেই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৪০৫ পয়েন্ট ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে নতুন সার্কিট ব্রেকার আনা না হলে তলানিতে গিয়ে ঠেকত শেয়ারবাজার।

লেনদেন
সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তন এনে পতন ঠেকানো গেলেও শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। মার্চ মাসের ১৮ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৬৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৪ টাকা। এতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৬৯ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার ৫৯৬ টাকা। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ২০ কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১২ হাজার ৪২৭ কোটি ৭৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৭ টাকা। এতে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকা। এ হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন কমেছে ২৫২ কোটি ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫১ টাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD