বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

করোনায় চিকিৎসা মিলছে না সর্দি-কাশি-জ্বরের রোগীর

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টাার : অসুস্থ আলমাছ উদ্দিনকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে রাজধানীর ছয়টি হাসপাতাল ঘুরেছেন তার সন্তানরা। ১৬ ঘণ্টা চেষ্টা করেও কোনো হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা যায়নি। অবশেষে এক হাসপাতালে ভর্তি করতে সক্ষম হলেও চিকিৎসা শুরুর আগে তিনি মারা যান। যদিও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ছিল না তার।

করোনা নিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির কারণে আলমাছ উদ্দিনের মতো অনেক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। জ্বর, সর্দি, কাশি বা অন্য রোগে ভোগা ব্যক্তিদের বিরাট অংশই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দিন দিন অভিযোগের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘কারো জ্বর হলে চিকিৎসকদের দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়া। যদি অবহেলা করে থাকে, আমি মনে করি, তারা অপরাধ করেছেন। এ ধরনের ঘটনা রিপিট হওয়া উচিত নয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসের কারণে অনেক চিকিৎসক ও নার্সও ভীত। যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়, তাই তারাও সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে চান। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর-কাশি হলেই কেউ করোনা রোগী হবেন, তা নয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় এ জাতি আজ দিশেহারা, আতঙ্কগ্রস্ত। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও পরিবার-স্বজন আছে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে পরিবারের অন্যদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় তারা ভীত।

তবে চিকিৎসকদের সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেছেন, এ সম্পর্কে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, রাসুলুল্লাহর (সা.) একটা বাণী আছে, মহামারির ক্ষেত্র থেকে যারা পালিয়ে যায়, তারা জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সমান অপরাধ করছে।

এই দুঃসময়ে সব মানুষ অসহায়ভাবে চিকিৎসকদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই ভীত না হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএমএ ও স্বাচিপের নেতারা।

বিএমএর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেছেন, আসুন, অতীতের মতো নিজেদের সুখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখি। মনে রাখবেন, মহামারি যদি সারা দেশের জনগণকে আক্রান্ত করে, তাহলে আমি, আপনি, আমাদের পরিবারও নিরাপদ নয়। আসুন, অসহায় মানুষের শয্যাপাশে তাদের সেবা করতে আমরা সাহসী হয়ে উঠি। আমাদের পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগ আর উত্তরসূরিদের সোনালি ভবিষ্যৎ আমাদের উজ্জীবিত করুক।

তিনি আরো বলেন, আমরা পেশায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। রোগীরা আমাদের সম্পদ। সেই সম্পদ আগলে রাখার দায়িত্ব আমাদের। রোগীরা ভালো না থাকলে, বেঁচে না থাকলে সমাজে বা পেশায় আমাদের উপস্থিতিও ম্লান হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক চিকিৎসক পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকায় কর্মস্থলে আসছেন না। কেউ কেউ আসলেও ঠিকমতো সেবা দিচ্ছেন না। রোগীর কাছে যাচ্ছেন না।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের পিপিই প্রয়োজন, তাদের দেওয়া হচ্ছে। এখনো পিপিই মজুদ আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সব জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। আরো কয়েক লাখ পিপিইর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হসপিটাল অ্যান্ড ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।

বিএসএমএমইউর সেকশন অফিসার (জনসংযোগ) প্রশান্ত কুমার মজুমদার বলেছেন, ‘জ্বর-সর্দি-কাশির রোগীদের জন্য শাহবাগে বাংলাদেশ বেতার ভবনের নীচতলায় ‘‘ফিভার ক্লিনিক’’ চালুর মাধ্যমে পৃথক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা সমন্বিতভাবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ফিভার ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রোগীরা।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD