বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন

কাপ্তাইয়ে আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হচ্ছে

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সোমবার (২২ জুন) একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। কাপ্তাইয়ের বেশির ভাগ করোনা আক্রান্ত রোগীরা হোম আইসোলেশন সেন্টার ব্যবহার করছে এবং সামরিক বাহিনীর যারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছে তারা নিজস্ব হাসপাতালে নিচ্ছে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু সাধারণ রোগীরা নিজ ঘরে আইসোলেশনে থাকায় অন্যদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তাই স্থানীয়দের মাঝে সরকারিভাবে আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে।

কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, কাপ্তাইয়ে এ পর্যন্ত ৪২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে নার্স এক যুবক। আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্য বেশি। কাপ্তাইয়ে সোমবার পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া করোনা রোগী পুলিশ সদস্য ১৩ জন, নৌবাহিনীর সদস্য ৮ জন, সেনাবাহিনীর ১ জন, আনসার ১ জন, চিকিৎসক ১ জন, স্বাস্থ্যকর্মী ৫ জন, সরকারি ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ২ জন, উপজেলা সদর বড়ইছড়ি এলাকার ৩ যুবক, কাপ্তাই পিডিবি এলাকার ৪ জন, মিশন এলাকার ১ জন যুবক, কেপিএম এলাকার ১ জন মহিলা, রাইখালী এলাকায় মৃত নার্স ও তার বাবা রয়েছে।

কাপ্তাই থানার ওসি নাসির উদ্দীন জানান, শুরু থেকে কাপ্তাইয়ের প্রতিটি পয়েন্টে ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন, ফলে এখন আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে।

কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুনায়েত কাউছার জানান, কাপ্তাইয়ের ১৩ জন পুলিশ সদস্য ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে এবং বাকীদের নিজস্ব ফাঁড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, অধিকাংশ পুলিশ সদস্যদের অবস্থা বর্তমানে ভালো। যদি কারোও অবস্থার অবনতি ঘটে হাসপাতালে পাঠানো হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাপ্তাই উপজেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গের রোগীর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই উপজেলার বিশিষ্টজনদের দাবি কাপ্তাইয়ে অতিদ্রুত একটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার বা ফ্লিড হাসপাতাল তৈরি করা। যাতে সাধারণ চিকিৎসা সেবা নিতে পারে।

কাপ্তাইয়ের ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ সেবাতো নেই, তার ওপর অক্সিজেনের প্রাপ্যতাও দুষ্কর। যে কয়টি সিলিন্ডার আছে তাও সময়মতো মেলে না। জঠিল রোগীদের রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যালসহ বাইরের হাসপাতালে।

এদিকে, করোনা উপসর্গের রোগীরা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে তাদের বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে পরিবারের বাকীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া পাড়া প্রতিবেশীদের বিভিন্ন রকম হেয় প্রতিপন্ন স্বীকারও হতে হয় তাদের। যা একজন করোনা উপসর্গের রোগীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে।

কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এ আর লিমন জানান, তিনি প্রথম থেকে কাপ্তাইয়ে আইসোলেশন সেন্টার এবং একটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সোচ্চার হয়েছেন, তবে কয়েকজন ব্যতীত কারো সাড়া পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা উপসর্গের রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সিট বুক হয়ে গেছে। যার ফলে নতুন রোগীরা জায়গা পাচ্ছে না। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই মুহূর্তে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা এবং উপজেলা সদর হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বৃদ্দি করে অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ আহমেদ চৌধুরী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যা হাসপাতাল এর ৩য় তলায় মাত্র ৪টি বেডে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এর বাইরে রোগী আসলে এই মুহূর্তে ভর্তি করা সম্ভব নয়।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, যদি কাপ্তাইয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে উপজেলা সদর বড়ইছড়ি কর্ণফুলি নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাপ্তাই আল আমিন নুরিয়া মাদরাসায় আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা হবে। আর যদি রাইখালী ইউনিয়নে করোনা রোগী বাড়ে তাহলে নারানগিরি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়েও আইসোলেশন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। অবস্থা বুঝে আমরা এসব উদ্যোগ নেব।

স্থানীয়দের মাঝে আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার দাবি ক্রমশ জোরালো হবার বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ যদি সচেতন হয় তাহলে আমরা করোনার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো। ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে কয়েকটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলাসহ সবধরণের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে।

কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, যে হারে কাপ্তাইয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই মুহূর্তে আইসোলেশন সেন্টারের প্রয়োজন বেশি। এ অবস্থায় কিছু কিছু এলাকাকে রেডজোনে চিহ্নিত করে লকডাউন না করলে ভবিষ্যৎতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে তিনি জানান।

লাইট নিউজ

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD