করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে গতকাল একজনের মৃত্যু হলেও নতুন করে খুব একটা আক্রান্তের খবর নেই। এটাকে সুখবর বলে মনে করছেন রাজধানীবাসী। তাই আতঙ্ক ঝেড়ে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। তারা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে হরহামেশাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে, সেনাবাহিনী বার্তা দিয়েছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। অকারণে ঘরের বাইরে অবস্থান এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নির্দেশনা সঠিকভাবে মানাতে তারা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে বলে ঘোষণায় বলেছে।
ডিএমপি কমিশনার রয়েছেন হার্ড লাইনে। তিনি বলেন, অযথা বাইরে ঘোরাফেরা করা যাবে না। এমন গাড়ি ঘুরতে বের হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শপিংমল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস আদালত বন্ধ। গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ সড়কে গণপরিবহনও। রাজধানী ঢাকায় তবুও নানা অজুহাতে বেরিয়ে পড়ছেন মানুষ। কেউ মুদি বাজার করতে, আবার কেউ বলছেন ওষুধ কিনতে বেরিয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র দেখা গেছে একে বাড়ে ভিন্ন। বেশির ভাগ মানুষ খোশগল্প করছেন।
বিশেষ করে খিলগাঁও, বনশ্রী, গুলশান লিংক রোড, বাসাবোর বিভিন্ন অলি-গলি রাস্তার পাশে, মোটরসাইকেলের উপরে বসে চলছে প্রেম আড্ডা। কেউ আবার রাস্তার পাশ ধরে হাটছেন। পুলিশি বাধা নানা অজুহাতে পাড় হয়ে যাচ্ছেন তারা। তবুও ঘরের বাইরে যেন যেতে হবেই। রাস্তা দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা। অনেকে বিকেল হলেই রিকশায় ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ছেন। এতে করে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বাংলাদেশ। নাগরিকদের ঘরমুখো করতে পুলিশ, প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী স্বল্প পরিসরে মাঠেন। কিন্তু তারপরও পুরোপুরি মানুষদের ঘরমুখো করা যাচ্ছিলো না। তাই করোনার বিস্তৃতি ঠেকাতে আজ থেকে কঠোরভাবে আবির্ভুত হচ্ছে সেনা বাহিনী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা, মালিবাগ, গুলিস্তান, কমলাপুর, ফকিরাপুল, পল্টন,শান্তিনগর, মানিক নগর, সায়েদাবাদসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ-সেনাবাহিনী চেকপোস্ট। পুলিশকে রিকশা থামিয়ে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাইরে না থাকার পরামর্শ দিতে দেখা গেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পুলিশ সদস্যরা যতই বোঝাচ্ছেন। কাজে আসছে না। কারণ ছাড়াই বাইরে ঘুরাঘুরি করছেন। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও অটোরিকশা। বিভিন্ন অলিগলিতে শিশুরা সড়কের ওপর খেলাধুলা করছে।
এদিকে খিলগাঁও, বনশ্রী, মালিবাগ, মৌচাক, প্রেসক্লাব এলাকায় সাহায্য প্রত্যাশিদের সড়কের পাশে ভিড় দেখা গেছে। তাদের সবার একই কথা কাজ বন্ধ, তাই সাহায্যই একমাত্র ভরসা। কখন সাহায্য আসবে। সেই অপেক্ষায় রাস্তায় বসে আছে।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসান বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় রাস্তায় গাড়ি, রিকশা একটু বেশি নেমেছে। যে কারণে আমরা হার্ডলাইনে যাচ্ছি। নিয়ম না মানলে গাড়ি আটক করা হবে।
দক্ষিণ খান জোনের ঢাকা মেট্রোপলিটন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল বলেন, অযথাই বের হওয়া ঠিক না। মানুষের ভালোই জন্য সরকার ঘরে থাকতে বলেছে। তাদের বোঝানো হচ্ছে। তবুও কাজ হচ্ছে না। রিকশা চালকদের বার বার বোঝানো হচ্ছে। তারপরও রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের সচেতনতা খুবই জরুরি।
এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, অযথা ঘরের বাইরে বের হওয়া ঠিক নয়। মানুষের সচেতনতার জন্য পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য করোনা প্রতিরোধে নানা স্বাস্থ্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তারপরও মানুষ সচেতন নয়। পুলিশ চেষ্টা করে যাবে। সাধারণ মানুষের পাশে থাকাই পুলিশের কাজ। রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অসহায়-দুস্থ মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ মাইকিং করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে বের না হতে অনুরোধ করছে।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারন্টাইন কঠোরভাবে নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। গতকাল বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২ এপ্রিল থেকে দেশের সব স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করবে সেনা বাহিনী। সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলী অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, করোনার সংক্রমণ রোধের কার্যক্রমে অংশ নিতে গত ২৪ মার্চ থেকে স্বল্প পরিসরে মাঠে নামে সেনা বাহিনী।