ভারতের সঙ্গে ‘অন্য রকম’ একটি ভালো সম্পর্ক গড়ার কথা গত সাত বছর ধরে বলে আসছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনার কথাও বলছিলেন বার বার। তবে ১৫ জুন দুদেশের নিয়ন্ত্রনরেখায় রক্তপাত নতুন করে ভাবাচ্ছে ভারতকে।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কূটনীতিকেরা মনে করছেন, শি জিনপিংয়ের কথায় ভারত যে মোহে পড়েছিল, সীমান্তে সেনাদের সংঘর্ষ তা থেকে মুক্ত করে ভারত-চীন সম্পর্ককে বাস্তবের জমিতে আছড়ে ফেলেছে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’টি সম্ভাবনাকে পাশাপাশি রেখে শি জিনপিংয়ের বক্তব্যকে বিচার করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, প্রাথমিকভাবে চীনা প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা ছিল ভারতের সঙ্গে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে এশিয়ায় একটি শক্তিশালী ব্লক তৈরি করা। পরে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। অথবা গোড়া থেকেই সম্মোহিত করার জন্য জাল বিছিয়ে মোদী সরকারকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।
চীনে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বাওয়াল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, দু’দেশের মধ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি হবে। যার প্রতিফলন পড়বে সীমান্তে। আর সীমান্ত ঠান্ডা থাকলে বাণিজ্য, পর্যটন সবই বাড়বে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার যুক্তি, চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ভারতের জন্য খুবই লাভজনক। তাই বারবার আছাড় খেয়েও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে দিল্লি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী প্রথম যে বিদেশী রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তিনি শি জিনপিং। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শি ভারতে থাকাকালীনই লাদাখে দুই সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। মোদীর কাছে জিনপিং দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন, সেনার কিছু ‘পচা অংশ’ তার সফরকে ভেস্তে দিতে এ কাজ করেছে। তিনি দেশে ফেরার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ওই সময় শি-র সৌজন্যে মুগ্ধ হয়েছিল সাউথ ব্লক। পরে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ঢোকার প্রশ্নে নয়াদিল্লিকে আটকে কিংবা প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রভাব খাটিয়ে ভারতের উপর চীন চাপ বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
কূটনীতিকেরা অবশ্য মনে করেন, মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন শি জিনপিং। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনের সময়ে তিনি আলাদাভাবে বৈঠক করেন মনমোহনের সঙ্গে। পরের বছর মোদী ক্ষমতায় আসার পরে বেইজিংয়ে নিযুক্ত হতে চলা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অশোক কান্তাকে ডেকে শি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি তার কাছে ঐতিহাসিক মিশন।
কান্তা বলেন, সেই সময় থেকেই ব্যক্তিগত ভাবে ভারতনীতি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন শি। যা চীনের রাজনীতিতে অভিনব।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, ভারতের প্রতি প্রেসিডেন্টের এই ‘অতি মুগ্ধতা’ ভালভাবে নেয়নি চীনের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগ। কারণ, ভারত-বিরোধিতা লালফৌজের ডিএনএ-তে। ওবর প্রকল্পে আপত্তি, আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কোয়াড বা চীন-বিরোধী চতুর্দেশীয় অক্ষ তৈরিতে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তগুলিকে সামনে এনে ভারত বিরোধিতার ঠান্ডা কৌশল তৈরি হয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও তাতে সামিল হন।