বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

নতুন ২৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে আসছে

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া কভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহেই ২৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়া শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এটাকে নিয়মিত কর্মসূচি বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা প্রতি বছরই ঈদের আগে নতুন টাকা বাজারে ছাড়া হয়। গত বছর ঈদেও ছাড়া হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ মানি থেকে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে আরও ৩৮ হাজার কোটি টাকার জোগান দেবে। যা একেবারেই নতুন টাকা।

এর বাইরে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। যার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকাই সরবরাহ করবে ব্যাংকগুলো। ফলে মানুষের হাতে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে এ মুহূর্তে নতুন টাকা ছেপে বাজারে ছাড়লে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এ মুুহূর্তে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। এ ছাড়া যে টাকা ছাড়া হবে সেটা তো পর্যায়ক্রমে তিন বা চার বছরে আবার বাজার থেকে তুলেও নেওয়া হবে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না নতুন টাকা বাজারে এলে। এ ছাড়া সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে হবে। কেননা বর্তমানে ব্যাংক খাতে কিছুটা তারল্য সংকট রয়েছে। আবার কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নতুন করে তেমন কোনো ডিপোজিটও আসছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য বাড়াতে হলে শুধু সিআরআর ও এসএলআর বাড়িয়ে কাজ হবে না, এর পাশাপাশি নতুন টাকাও দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোর সিআরআর ও এসএলআর কমানো হয়েছে। এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মতো তারল্য রয়েছে। তবে বেশির ভাগই সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোর হাতে এ মুহূর্তে ঋণ দেওয়ার মতো ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে বোধহয় নতুন করে টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হবে না। কেননা প্রতি বছর ঈদের আগে এমনিতেই কিছু না কিছু নতুন টাকা ছাড়া হয়। সেটা অনেক সময় রিজার্ভ মানি থেকেও দেওয়া হয়।

তবে একেবারেই নতুন টাকা ছাপানোর আগে মনে হয় আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়। যেমন বিল, বন্ড এগুলো সরকার কিনে নিতে পারে। সরকার নতুন করে বন্ড বা বিল ইস্যু করে বাজারে ছাড়তে পারে। আবার ব্যাংকগুলোর ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) এবং স্টেটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) আরও কমিয়ে দিতে পারে। এতেও খানিকটা সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে যদি এসবের কোনোটিতেই পরিস্থিতি সামলানো না যায় তাহলে তো টাকা ছাপাতেই হবে।

এ মুহূর্তে অবশ্য মূল্যস্ফীতির চাপ বেশ সহনীয়ই রয়েছে। নতুন করে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হলে সেই মূল্যস্ফীতির চাপ তো কিছুটা বাড়বেই। তবে সেটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে না পারলে আবার জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর এর একটা প্রভাব পড়বে। এখন তো মানুষের হাতে এমনিতেই টাকার সরবরাহ কম। তাই আগে টাকার সরবরাহ বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মনে হয় টাকা ছাপানোর এখনো সময় আসেনি। আমরা এমন একটা অবস্থায় পড়েছি সরবরাহের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন রয়েছে, মানুষের চাহিদা নেই। এখন মানুষের হাতে টাকা দিলে, বাজারে যদি জিনিসপত্র না থাকে তাহলে মূল্যস্ফীতি হবে।

টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য বাড়ানোর বিভিন্ন পলিসি সাপোর্ট দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সাহায্য আনতে পারি। সুতরাং টাকা ছাপানোর আগে আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে।

লাইটনিউজ/এসআই

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD