বাংলাদেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঢাকার পার্শ্ববর্তী আশুলিয়া। বস্ত্র-পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, ফার্নিচার, প্লাস্টিকসহ সব মিলিয়ে আশুলিয়া এলাকায় শিল্প-কারখানা আছে ১ হাজার ৩৫৬টি। করোনাভাইরাস আতঙ্কে এর মধ্যে ১ হাজার ২৯৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৬১টি কারখানা সচল আছে।
শুধু আশুলিয়া নয়, একই অবস্থা দেশের অন্যান্য শিল্প এলাকায়ও। দেশে শিল্প অধ্যুষিত এলাকা আছে মোট ছয়টি। সব খাত মিলিয়ে এ এলাকাগুলোতে শিল্প-কারখানা আছে ৭ হাজার ৪০৮টি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, এর মধ্যে ৬ হাজার ৪২৩টি বা ৮৭ শতাংশ শিল্প-কারখানাই বন্ধ ছিল গতকাল। সচল ছিল বাকি ৯৮৫টি। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ও কাজের সংকট—এ দুই কারণেই শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর যেসব কারখানা চালু আছে, সেগুলোর কাজ আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আশুলিয়ায় মোট ১ হাজার ৩৫৬টি কারখানার মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৫২৭টি, যার মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৫০১টি।
গাজীপুরে মোট কারখানা আছে ২ হাজার ৭২টি। এর মধ্যে বন্ধ হয়েছে ১ হাজার ৫৫৬টি। এ এলাকায় বস্ত্র ও পোশাক খাতের সংগঠনগুলোর সদস্য কারখানা আছে ১ হাজার ৮৫টি। এসব কারখানার মধ্যে বন্ধ ৮৯৪টি।
চট্টগ্রামে মোট শিল্প-কারখানা আছে ১ হাজার ৩৫টি। এর মধ্যে বন্ধ ৮৭৫টি। এ এলাকায় সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্য বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা আছে ৪৩১টি। এর মধ্যে গতকাল বন্ধ ছিল ৩৯৮টি।
নারায়ণগঞ্জে মোট শিল্প-কারখানা আছে ২ হাজার ৪৫৯টি। এর মধ্যে বন্ধ হয়েছে ২ হাজার ৩৩১টি। এ এলাকায় বস্ত্র ও পোশাক কারখানা আছে ১ হাজার ২৪২টি। যার মধ্যে বন্ধ ১ হাজার ১৯৫টি।
ময়মনসিংহে মোট শিল্প-কারখানা আছে ১৩১টি। যার মধ্যে বন্ধ ৮৮টি। এ এলাকায় বস্ত্র ও পোশাক কারখানা আছে ৭২টি। গতকাল বন্ধ ছিল ৭০টি।
শিল্প পুলিশ-৬ বা খুলনায় মোট শিল্প-কারখানা আছে ৩৫৫টি, যার মধ্যে বন্ধ ২৭৮টি। খুলনা এলাকায় বস্ত্র ও পোশাক কারখানা আছে নয়টি, যার সবগুলোই বন্ধ।
কারখানা সচল বা বন্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার করোনার প্রভাবে অনেক কারখানায় কাজও নেই। মূলত এ দুই কারণে অধিকাংশ শিল্প-কারখানাই বন্ধ রয়েছে শিল্প পুলিশের আওতাধীন এলাকাগুলোয়।
শিল্প খাত ও সরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, অধিকাংশ শিল্প-কারখানা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখিয়েই বন্ধ হয়েছে। ২৬ মার্চ কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিতে পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানায় সংশ্লিষ্ট সংগঠন বিজিএমইএ। আরেক সংগঠন বিকেএমইএও গতকাল নিট পোশাক কারখানা মালিকদের প্রতি বন্ধের নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু তার পরও সচল থাকছে পোশাকসহ কিছু শিল্প-কারখানা।
জানা গেছে, পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও অনেক শিল্প মালিকই তার পোশাক কারখানা সচল রাখতে আগ্রহী। কারণ তাদের ক্রয়াদেশ বহাল আছে। আবার কিছু কারখানা আছে যারা করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাকের (পিপিই) আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটেই মূলত কাজ আছে এমন কারখানাগুলোর মালিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শ্রমিকের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে কারখানা সচল রাখছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী শিল্প এলাকার কিছু পোশাক কারখানা ৩১ মার্চ পর্যন্ত সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। এছাড়া যেসব কারখানা পিপিইর ক্রয়াদেশ পাচ্ছে, সেগুলো সচল রাখার বিষয়ে সরকারেরও কোনো আপত্তি নেই।
২৭ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধীনস্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) একটি আদেশ জারি করে। জাতীর উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শিল্প-কলকারখানা বন্ধের কোনো নির্দেশনা ছিল না এমন তথ্য উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, যেসব রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ বহাল রয়েছে এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি অপরিহার্য পণ্য যেমন—পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট, মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ/স্যানিটাইজার, ওষুধপত্র উৎপাদনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে উৎপাদন চালু রাখতে পারবেন।