রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

রিজার্ভ চুরির মামলার একটি খারিজ, চলবে চারটি

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে পাঁচটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলাগুলো খারিজের আবেদন করেছিল আরসিবিসি। এর মধ্যে একটি আবেদন গ্রহণ করলেও বাকি চারটি নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির আদালত।

অর্থাৎ পাঁচটি মামলার মধ্যে একটি খারিজ হয়েছে, বাকি চারটি চালিয়ে যাওয়ার রায় দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট (এসডিএনওয়াই)।

আরসিবিসি ছাড়াও সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনো, মাইডাস রিসোর্ট ও ক্যাসিনো এবং অন্যদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলেছিল, টেকনিক্যাল বিষয় বিবেচনায় সেই অভিযোগ ফেডারেল কোর্ট গ্রহণ করেননি। ফলে আরসিবিসি, সোলায়ার, মাইডাস এবং অন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি, রূপান্তর ও অন্য অভিযোগগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিউ ইয়র্ক স্টেট আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। গত শুক্রবার ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

সোমবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি), সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনো, মাইডাস রিসোর্ট ও ক্যাসিনো এবং অন্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার বিপরীতে বিবাদীদের করা আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোটর্ খারিজ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার পূর্বেই মামলার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোর্টের এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে আরসিবিসিসহ অন্যরা পাল্টা মামলা দায়ের করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি খারিজের আবেদন করে। সেই মামলার দীর্ঘ শুনানির পর আরসিবিসিসহ অন্যদের আবেদন ফোরাম নন-কনভিনিয়েন্স ডকট্রিন অনুযায়ী আদালত খারিজ করে দিয়েছে এবং মামলাটি নিউ ইয়র্কের স্টেট আদালতে করা যাবে বলে রায় দিয়েছে। এর অর্থ হলো, মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নৈতিক জয় হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আইনজীবীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করা সম্ভব হবে’— জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, ‘কেসের বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোর্টের এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে আরসিবিসি যে আবেদন (Motion to dismiss) করে তা forum non conveniens doctrine অনুযায়ী আদালত খারিজ করে দিয়েছে। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, এ চুরি নিউ ইয়র্কে অবস্থিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে হয়েছিল। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডার, বিভিন্ন করেসপন্ডেন্ট অ্যাকাউন্টে চুরি করা অর্থের লেনদেন এবং এসব অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে অর্থ প্রেরণ— সবই নিউ ইয়র্কে সংঘটিত হয়েছে।’

‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান বাউম তার ঘোষণায় দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন, ফেডারেল রিজার্ভ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে যাতে ফেডারেল রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংককে তার মামলা-মোকদ্দমার ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বলেছে, জনস্বার্থের দিকগুলো বিবেচনায় নিউ ইয়র্ক-ই এ মামলা পরিচালনার জন্য যথাযথ ফোরাম। যেখানে ডিস্ট্রিক্টের একটি ফেডারেল প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক Racketeer Influenced and Corrupt Organisations Act (RICO) এর আওতায় আরসিবিসি ব্যাংক ও জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি টেকনিক্যাল বিষয় বিবেচনায় ফেডারেল আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করেনি।’

অর্থাৎ এ সিদ্ধান্তের ফলে আরসিবিসি, সোলায়ার, মাইডাস ও অন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি, রূপান্তরের ষড়যন্ত্র এবং অন্য অভিযোগগুলোর বিষয়ে সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট (এসডিএনওয়াই) এর পরিবর্তে নিউ ইয়র্ক স্টেট আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে মামলাটি নিউ ইয়র্ক আদালতের বিচারিক এখতিয়ারভুক্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি ও অন্য বিবাদীদের থেকে ক্ষয়ক্ষতি আদায়ের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার যায় শ্রীলংকায়। বানান ভুলের কারণে ও ব্যাংকিং সিস্টেমে থাকায় তা উদ্ধার সম্ভব হয়। বাকি আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার। এখনও রয়ে গেছে ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার।

রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি (বাংলাদেশের স্থানীয় সময়) আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলায় ফিলিপাইনের পাঁচটি আর্থিক ও ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠান, দেশটির ১২ জন, তিনজন চীনা নাগরিকসহ মোট ২০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD