বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন

এক বছরে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, শীর্ষে ঢাকা

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩

সারা দেশে গত এক বছরে (২০২২) স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে তথ্য উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। এই ৪৪৬ জনের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ জন এবং কলেজ পর্যায়ের ১০৬ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন ২০২২ সালে।

শুক্রবার বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়।

আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী জানান, দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্য নেওয়া হয়েছে তাদের এই সমীক্ষায়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন। এর মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী- গত বছর জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে ২১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং ডিসেম্বরে ৩৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন।

আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা
দেশের আট বিভাগে আত্মহত্যা করা স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, যা মোট আত্মহত্যার প্রায় ২৩.৭৭ শতাংশ। এরপরই চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

আত্মহত্যায় এগিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন বলছে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি।

আত্মহত্যা করা স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৩.৯০ শতাংশ অর্থাৎ ২৮৫ জনই মেয়ে; বাকি ১৬১ জন অর্থাৎ ৩৬.১ শতাংশ ছেলে।

বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকি বেশি
সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

২০২২ সালে যে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেছে, তাদের মধ্যে ৪০৫ জন বা ৭৬.১২ শতাংশই অপ্রাপ্তবয়সী। তাদের মধ্যে ৬৫.৯৩ শতাংশ মেয়ে; ৩৪.০৭ শতাংশ ছেলে।

আবার আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের ৪৩ জন বা ৮.০৮ শতাংশের বয়স ছিল ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ৪৬.৫২ শতাংশ মেয়ে। আর ছেলেদের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি, ৫৩.৪৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়, সে কারণে ওই বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি।

আত্মহত্যার কারণ
আঁচলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের তথ্যে জীবদ্দশায় তাদের নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হওয়ার বিষয় এসেছে। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ‘মান-অভিমান’ থেকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ জানা যায়নি।

তবে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আরো বেশ কিছু বিষয় এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়- আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪ জন, শিক্ষকের হাতে ‘অপমানিত’ হয়ে ৬ জন, গেইম খেলতে বাধা দেয়ায় ৭ জন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD