ডেস্ক রিপোর্ট : মেদহীন ছিপছিপে গড়ন কে না চায়? শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে কিংবা ফিটনেস ধরে রাখতে ডায়েট বেশ কার্যকর। তবে ডায়েট করতে হবে জেনে-বুঝে। নয়তো ওজন কমাতে গিয়ে অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন। করোনাকালীন এ সময় ডায়েট করা যাবে কিনা কিংবা সুস্থ থাকতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট তামান্না চৌধুরী। লিখেছেন- কেয়া আমান।
শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে বা ফিটনেস ধরে রাখতে আমরা অনেকেই নানা ধরনের ডায়েট করি। ওজন কমাতে ডায়েট কার্যকর। তবে ডায়েট করতে হবে বুঝে-শুনে। আমাদের অনেকের মধ্যেই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ না নিয়ে, না জেনে ডায়েট করার প্রবণতা দেখা যায়। অনেকেই ডায়েট করা মানে কেবল কম খাওয়া বা না খাওয়া বুঝে থাকেন। অনেকের ডায়েট চার্টেই দেখা যায় সুষম খাবার থাকে না। এ ধরনের ডায়েটে অনেক সময় ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যায়। আবার ওজন কমলেও শারীরিকভাবে অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়েন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ গত বছরের চেয়ে শক্তিশালী। আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। মহামারি করোনা থেকে সুস্থ থাকতে এ মুহূর্তে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে তোলা। এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষণ অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ, সেগুলো সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এ সময় যদি আমরা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করি কিংবা আমাদের ডায়েটে ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ে এমন খাবার না থাকে তাহলে আমরা সহজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি এবং তা সহজেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই এখন আমাদের ডায়েট করার চেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এমন খাবারে। ডায়েট করলেও তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কিনা সে বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট তামান্না চৌধুরী বলেন, “করোনাকালীন এ সময় আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এমনভাবে ডায়েট মেইনটেন করতে হবে যাতে শরীরের ইমিউনিটি শক্তিশালী হয়। কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ইমিউনিটি সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়াতে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, প্রোটিন ভালো কাজ করে। আমাদের মনে রাখতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়াতে শুধু নির্দিষ্ট একটি পুষ্টি উপাদানে পুরোপুরি কাজ করে না। কয়েক ধরনের পুষ্টি উপাদান সম্মিলিতভাবে ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এ সময় আমাদের খাদ্যাভ্যাস এমন হওয়া উচিত যাতে খাবারে কয়েক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে এবং এ পুষ্টি উপাদান অবশ্যই খাবার থেকেই গ্রহণ করতে হবে, সাপলিমেন্ট থেকে নয়।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শরীরে কোষের গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিন। আর দুর্বল শরীরে শক্তির জোগান দিতেও প্রোটিনের চাহিদা এ সময়ে বেশি। তাই এখন দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কিছুটা প্রোটিন রাখতেই হবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, পনির ইত্যাদি খাবার প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের ভালো উৎস। ভালো ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ভালো কাজ করে কিন্তু খারাপ ফ্যাট আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে কমিয়ে দেয়। সে জন্য ট্রান্সফ্যাট এখন বাদ দিতে হবে। ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। যতটা বেশি সম্ভব হোমমেইড খাবার গ্রহণ করতে হবে। বাসায় রান্না করা খাবারে আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচসহ নানা ধরনের মসলা এবং হার্বস ব্যবহার হয়। এ মসলাগুলোতে আমাদের ইমিউনিটির উৎস থাকে। এখন শরীরে যেন পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পানিশূন্যতা এড়াতে ছোট বড় সবাইকে তরল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। অনেকেই মনে করেন তরল খাবার মানেই কেবল পানি বা দুধ। তা কিন্তু নয়। স্যুপ, ডাল, ডাবের পানি এ জাতীয় খাবারগুলোও কিন্তু তরল খাবার। শুধু করোনা নয় এ সময় অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গি থেকে সুস্থ থাকতেও বিভিন্ন ধরনের তরল খাবার ২ ঘণ্টা পর পর খেতে হবে।’
‘ডায়েট করা যেতেই পারে তবে সুষম খাবার সম্পর্কে না জেনে ডায়েট করা উচিত নয়। এ সময় ডায়েটের চেয়ে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ানোতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাই ডায়েট যদি করতেই হয় তবে আপনার খাদ্যতালিকা এমনভাবে নির্বাচন করুন যেখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। সেই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার বা পুষ্টি নয়। ইমিউনিটি বাড়াতে প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান’-বলে জানান তামান্না চৌধুরী।
এ সময়
* প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আদা রাখুন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাঁচা রসুনও উপকারী।
* প্রতিদিন অন্তত দুটি মৌসুমি ফল অবশ্যই খেতে হবে।
* প্রতিদিন টকদই খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
* প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ২-৩টি আমন্ড রাখুন।
* এ সময় উচ্চমানের আমিষজাতীয় খাবার (ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি) বেশি বেশি খেতে হবে।
* খাদ্যতালিকা দুধ ও দুধজাতীয় খাবার বেশি রাখুন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যে খাবারগুলো বেশি বেশি খেতে হবে-
বিটা ক্যারোটিন-উজ্জ্বল রঙের ফল ও সবজি।
ভিটামিন ‘এ’-গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, ডিম, কলিজা।
ভিটামিন ‘ই’-কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, বাদাম তেল, বিচিজাতীয় খাবার।
ভিটামিন ‘সি’-আমলকী, লেবু, মাল্টা, পেয়ারা, কমলা।
সামগ্রিকভাবে উদ্ভিজ্জ খাবারই হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, বিশেষ করে কমলা, হলুদ, নীল ও বেগুনি রঙের শাকসবজি ও ফলমূল।
যেসব খাবার বাদ দিতে হবে
সব ধরনের কার্বনেটেড ড্রিংকস, সিগারেট, তামাক, জর্দা, সাদাপাতা বাদ দিতে হবে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম, চিনি ও চিনির তৈরি খাবার ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়তা করে। তাই এ ধরনের খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
এ ছাড়া-খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। তবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমরা সক্ষম হব।