মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

ওমিক্রন বেড়েই চলেছে

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

রাজধানী ঢাকায় করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১০ দিনে ঢাকায় ওমিক্রনে শনাক্ত রোগী ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি ঢাকার বাইরের কিছু জেলায় ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়াটা একটা অশুভ ইঙ্গিত। আমর যদি এটাকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত এবং শক্তিশালী না করি, তাহলে পরে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

দেশে এ পর্যন্ত ৫৫ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার থেকে গত রবিবার পর্যন্ত চার দিনে ২২ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে সর্বশেষ গত বুধবার তিনজনের শরীরে ওমিক্রন পাওয়া গিয়েছিল।

সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ঢাকায় যে নমুনার জেনোম সিকোয়েন্স করেছি, তাতে দেখা গেছে ওমিক্রন (আক্রান্তের) এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। আমরা গত ১০ দিনের মধ্যে এ তথ্য পেয়েছি। আমরা মনে করি, ঢাকার বাইরেও একই হার হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ডেল্টা ও ওমিক্রনে আক্রান্ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমরা এ বিষয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত, আতঙ্কিত। গত ১৫ দিনে ১৮ শতাংশে চলে এসেছে শনাক্তের হার। যেভাবে বাড়ছে, তাতে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়াতে বেশি সময় লাগবে না। এখন যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোনো জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে জনগণকে আহ্বান করছি, অনুরোধ করছি, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মানে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঢাকায় ওমিক্রনের গুচ্ছ গুচ্ছ সংক্রমণ একাকার হয়ে গণসংক্রমণে রূপ নিয়েছে। ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে এখানে নেতৃত্ব দৃশ্যমান হতে হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক বিধিনিষেধ সফলতার উদাহরণ আছে। এখন সেভাবে ঢাকা শহরকে ওয়ার্ডভিত্তিক ভাগ করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে এবং সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার মধ্যে ও ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে চলাচলরত আন্তঃনগর গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, টার্মিনালগুলোতে স্ক্রিনিং করতে হবে। এসব উদ্যোগ নেওয়ার সময় অনেক আগেই হয়েছে। এখন অপেক্ষা না করে পুরোদমে শুরু করতে হবে।

ঢাকার বাইরেও ওমিক্রন দেখা দিচ্ছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, যেদিন থেকে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের দিকে ধাবিত হয়েছে, সেদিন থেকেই ঢাকায় ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে ওমিক্রন মাত্র হানা দিয়েছে। যশোরসহ আরও দু-একটি জেলায় বিক্ষিপ্ত আকারে ওমিক্রনের সংক্রমণ হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে ব্যাপক আকারে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকার বাইরে এখনো ডেল্টার প্রভাবই বেশি।

দেশে এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। (১০-১৬ জানুয়ারি) এক সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৪ হাজার ১১ জন। এর আগের সপ্তাহে (৩-৯ জানুয়ারি) রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ২৩৪ জন; অর্থাৎ এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ২৩১ দশমিক ৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। এর আগের সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। এক সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে টিকা নেয়নি ৩১ জন, অর্থাৎ টিকা নেয়নি ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ। যে ১১ জন টিকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৯ জন সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন, ২ জন নিয়েছিলেন প্রথম ডোজ।

গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা) নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এর আগের দিন গত রবিবার এক দিনে ৫ হাজার ২২২ জন শনাক্ত হয়েছিল এবং মৃত্যু হয় ৮ জনের। এর আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট এক দিনে এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৫৬৬ জন; যা ৫ মাস পর আরও রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার ছাড়াল।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD