শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

অর্থনীতির প্রতিটি খাত এখন সংকটে: ড. ওয়াহিদ উদ্দিন

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪

দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় নেই, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। এর আগেও এসব সংকট ছিল, কিন্তু তখন প্রকাশ পায়নি। এখন রিজার্ভ সংকট, সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দা, তাই এগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। আগে নেতিবাচক দিকগুলো সামাল দেওয়া গেলেও এখন সামাল দেওয়া কঠিন।

দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী খাতই এখন অরক্ষিত। এটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে, আবার টাকা জমাও হয়, রাতারাতি সে টাকাও উধাও হয়ে যায়।

সোমবার (১০ জুন) ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় বাজেট উত্থাপন হয়েছে সংসদে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর খেলাপির পাল্লা ভারী হচ্ছে। দুর্নীতি, অর্থপাচার আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের অবস্থা দেখলে বোঝা যায় রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে নিম্নতম হারের দিকে আমরা অবস্থান করছি। এর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের চাপ আর নানা ভর্তুকির বোঝা।

রাজস্ব আহরণের হার নিম্নমানের হলেও এ বিষয়টি সবসময়ই অবহেলায় ছিল বলেও মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর আরও চাপ বাড়বে। যা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে দেওয়া আর ঋণ নেওয়া এগুলো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ খেলাপি ব্যাংক খাতের সংকট আরও ঘনীভূত করছে। এতে ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে। ব্যাংক থেকে ছোট উদ্যোক্তারা তো ঋণই পাবে না।

দেশের শীর্ষ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকারি ব্যয়ের অপচয় রোধ করতে পারিনি, বাজেটেও তার প্রতিফলন হয়নি। ব্যাপক অপচয় হচ্ছে, এখানে আস্থা তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে পারছি না।

অর্থনীতির প্রতিটি খাত এখন সংকটে: ড. ওয়াহিদ উদ্দিন

তিনি বলেন, একজন ব্যাংকে টাকা রাখলেন আবার রাতারাতি ব্যাংক থেকে সেই টাকা উধাও করে ফেললেন, এটা কীভাবে সম্ভব হয়। স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বিএফআইইউকে (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাজে লাগাতে হবে।

বিনিয়োগ বিষয়ে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, ৯০-এর দশকে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের অবস্থা একই রকম ছিল। একটা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র আমেরিকার বিনিয়োগ টানতে পারছে আর আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সংকট মোকাবিলায় নতুন করে কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া যাবে না। যে প্রকল্প চলছে বা আসছে তার ভবিষ্যতও দেখতে হবে। এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে কী সুফল আসবে তা-ও দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, তবে কিছু প্রকল্প অনেক কাজের, অবদানও রয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে আমাদের খরচ কমাতে হবে। একই সঙ্গে কালো টাকা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করার সুযোগে ক্রমেই আমরা ‘স্মার্ট নৈতিকতাহীন’ হয়ে পড়বো। আর স্মার্ট মানুষ নৈতিকতাহীন হলে সেটা হবে ভয়ংকর।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD