মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

‘আল্লাহতায়ালা আপনাকে মাফ করবেন না’

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কেউ মারাত্মক কোনো গোনাহে লিপ্ত হলে অথবা কেউ কারও সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক কোনো আচরণ করলে আমরা ‘আল্লাহ আপনাকে মাফ করবে না’ বাক্যটি উচ্চারণ করে থাকি। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন, এটি বলে আপনি আল্লাহর অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন। আল্লাহ কাকে মাফ করবেন আর কাকে মাফ করবেন না, এটা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছাধীন। এমনও তো হতে পারে যে, সে তওবা করে হেদায়েতের নিয়ামত লাভ করতে পারে। কারণ হেদায়েতের মালিক আল্লাহতায়ালা। তিনি যাকে চান হেদায়েত দান করেন আবার যাকে চান গোমরাহির পথকে লম্বা করে দেন।

তাছাড়া এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা কাউকে দায়িত্ব দেননি যে, আপনি বলে দেবেন, তোমাকে মাফ করা হবে না। বরং আপনি বলতে পারেন, আপনি যে কর্মনীতি গ্রহণ করেছেন, তা আল্লাহর আদেশের লঙ্ঘন। দয়া করে আপনি তা ছেড়ে দিন এবং হেদায়েতের পথে চলে আসুন। তবে কোনো ব্যক্তি আপনার নিজের হক নষ্ট করলে আপনি তাকে বলতে পারেন যে, আমার হক ফিরিয়ে না দিলে তোমাকে ক্ষমা করব না। কোনো ব্যক্তি আল্লাহর হক নষ্ট করলে তাকে মাফ করা না করা আল্লাহর ইচ্ছা। তাই, ‘আল্লাহ আপনাকে মাফ করবে না’ এ কথা বলা যাবে না।

আপনি তো ভালো করে জানেন যে, আল্লাহতায়ালার অনেক গুণবাচক নামের মধ্যে দু’টো নাম হলো- আল গাফফার অতিশয় ক্ষমাশীল, ক্ষমাকারী এবং আল গাফুর মহাক্ষমাশীল। শব্দ দু’টির মূল একই। গাফফার শব্দটি আরবি ভাষায় আধিক্যবোধক শব্দ। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও মহাক্ষমাকারী। বান্দা বারবার ভুল করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করলে, আল্লাহ মাফ করে দেন। কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ –সূরা আলে ইমরান: ৩১

আল্লাহ এমনই করুণাময় গাফফার যে, চরম অপরাধের পর ফিরে এলে তিনি কাউকে ফিরিয়ে দেন না। আল্লাহ বলেন, ‘হা-মীম। এ কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত যিনি মহাপরাক্রমশালী, সবকিছু সম্পর্কে অতিশয় জ্ঞাত, গোনাহ মাফকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা এবং অত্যন্ত দয়ালু। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। সবাইকে তার দিকে ফিরে যেতে হবে।’ -সূরা মুমিন: ১-২

এখানে লক্ষণীয় যে, ক্রমানুসারে আল্লাহর কতগুলো গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম দু’টি গুণের পর ‘আল্লাহ গোনাহ মাফকারী ও তওবা কবুলকারী’ গুণটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা এখন পর্যন্ত বিদ্রোহ করে চলেছে তারা যেন নিরাশ না হয় বরং একথা ভেবে নিজেদের আচরণ পুনর্বিবেচনা করে যে, এখনও যদি তারা এ আচরণ থেকে বিরত হয় তাহলে আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারে।

বড় বড় উন্নত পর্যায়ের ঈমানদারও ভুল করতে পারেন এবং তাদের ভুল হয়েছেও। যত দিন মানুষ মানুষ হিসেবে দুনিয়ার বুকে বেঁচে আছে তত দিন তার আমলনামা শুধু উৎকৃষ্ট মানের কার্যকলাপে ভর্তি থাকবে এবং দোষত্রুটি ও ভুলভ্রান্তি থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকবে এমনটি হতে পারে না। কিন্তু মহান আল্লাহর একটি বড় রহমত হচ্ছে এই যে, যত দিন মানুষ বন্দেগির অনিবার্য শর্তগুলো পূর্ণ করে তত দিন আল্লাহ গাফুরুর রাহিম তার ভুলত্রুটি উপেক্ষা করতে থাকেন এবং তার কার্যাবলি যে ধরনের প্রতিদান লাভের যোগ্যতাসম্পন্ন হয় নিজ অনুগ্রহে তার চেয়ে কিছু বেশি প্রতিদান তাকে দান করেন নয়তো যদি প্রত্যেকটি ভুলের শাস্তি ও প্রত্যেকটি ভালো কাজের পুরস্কার আলাদাভাবে দেওয়ার নিয়ম করা হতো তাহলে অতি বড় সৎলোকও শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেত না।

দ্বিতীয় ‘আল্লাহ আপনাকে মাফ না করুক’ বাক্যটি অনেকটা বদদোয়ার মতো হয়ে যায়। আপনার ওপর সব মানুষের হক হলো, আপনি সর্বদা তাদের কল্যাণ কামনা করবেন। কারণ আপনাকে মানবতার কল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে। কারও জন্য বদদোয়া করার অধিকার আপনার নেই।

সর্বোপরি কথা হলো, বান্দা তওবা করে ফিরে এলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। শুধু মাফই করেন তা নয়, আল্লাহতায়ালা হাদিসে বর্ণিত মরুভূমির সেই যাত্রী থেকেও বেশি খুশি হন। যেই যাত্রী অন্তহীন মরুভূমির মাঝে বিশ্রামের জন্য একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সামান্য তন্দ্রা পেয়েছিল। তন্দ্রা ভাঙলে দেখেন তার সামান্য পানি-খাদ্যসহ ঘোড়াটি হারিয়ে গেছে। অন্তহীন মরুভূমিতে মৃত্যু ছাড়া তার আর কোনো পথ খোলা নেই। উপায়ন্তর না দেখে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলেন ঘোড়াটি তারই সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘোড়া ও খাদ্য পানি পেয়ে সেই ব্যক্তি যতটুকু খুশি হন আল্লাহ তার চেয়েও বেশি খুশি হন বান্দা যখন তওবা করে ফিরে আসে।

প্রকৃত ব্যাপার হলো, আল্লাহ যদি কারও কল্যাণ করতে চান তা বাধাগ্রস্ত করার শক্তি কারও নেই। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো বিপদে ফেলেন তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই সেই বিপদ দূর করতে পারে। আর যদি তিনি তোমার কোনো কল্যাণ চান তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাকে চান অনুগ্রহ করেন এবং তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ -সূরা ইউনুস: ১০৭

লাইটনিউজ

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD