মুমিনের একটি গুণ অনেক দামী। ওই গুণ যাদের আছে, তাদের ধারণাতীত উৎস থেকে আল্লাহ রিজিক দিয়ে থাকেন। সেই গুণটি হলো- আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা। মহান আল্লাহ একাধিক আয়াতে মুমিনদের সেই গুণ অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা
বলেন, ‘…তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে আল্লাহর ওপরেই ভরসা করো।’ (সুরা মায়েদা: ২৩) অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিনদের আল্লাহর ওপর ভরসা করা উচিত।’ (সুরা ইবরাহিম: ১১) ‘..এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরেই নির্ভর করে’ (সুরা আনফাল: ২)
আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের তিনি এমন উৎস থেকে রিজিক দিয়ে থাকেন, যা তারা কল্পনাও করে না। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ভরসা করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে এমনভাবে
রিজিক দান করবেন, যেমন পাখিদের দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, মেশকাত: ৫০৬৯)
আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের বড় পুরস্কারটি হলো- তিনিই ওই বান্দার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বান্দার আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩) আরও ইরশাদ হয়েছে, ইরশাদ হয়েছে,
‘বস্তুত, যারা ভরসা করে আল্লাহর ওপর, তারা নিশ্চিন্ত। কেননা আল্লাহ অতি পরাক্রমশীল, সুবিজ্ঞ।’ (সুরা আনফাল: ৪৯)
কেয়ামতের দিন বিনা হিসাবে যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তাদের মহান গুণটি হলো তাওয়াক্কুল। তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপরই তারা ভরসা করত। হজরত ইমরান (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, তারা কারা, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যারা ক্ষতস্থানে লোহা পুড়ে লাগায় না এবং (জাহেলি যুগের মতো) ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্রের দ্বারা চিকিৎসা কামনা করে না। বরং তারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করে। (মুসলিম: ৪১২)
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো- আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের তিনি ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)
স্বয়ং আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন, তাদের আবার চিন্তা কীসের! তাছাড়া আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, তাদের জন্য তিনিই যথেষ্ট। তাহলে তাদের ঠেকায় কে! তাদের তো আসলেই চিন্তার কারণ নেই। যুদ্ধের ময়দানে সাহাবাদের তাওয়াক্কুল ও শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার অবস্থা তুলে ধরে মহান আল্লাহ
বলেন, ‘যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে তোমাদের সঙ্গে মোকাবেলা করার জন্য মানুষ জড়ো করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় করো। তখন তাদের বিশ্বাস আরো দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। কত চমৎকার কামিয়াবি দানকারী। অতঃপর মুসলমানরা
ফিরে এলো আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তাদের কোনো অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হলো। বস্তুত, আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বেশি।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭৩-১৭৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রত্যেক বিষয়ে তাঁরই ওপর যথাযথ ভরসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।