মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

করোনায় জরুরি অবস্থার পথে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও শক্তিশালী হয়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের পুনরাগমনের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় নড়েচড়ে উঠেছে ইউরোপ আর উদ্বেগ বাড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে করোনা বড় আকারের আঘাত হেনেছিল। বিশ্ব মিডিয়া এইসব খবর জানিয়ে করোনাকে আবার নিয়ে এসেছে শীর্ষ শিরোনামে।

পশ্চিম ইউরোপের দেশ স্পেনের রাজধানী ও প্রধান শহর মাদ্রিদে লকডাউনের ‘সক্রিয় চিন্তাভাবনা’ করা হচ্ছে। পূর্ব ইউরোপেও দেখা যাচ্ছে সতর্কতা। চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া এ সপ্তাহে স্ব স্ব দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, বেশির ভাগ বড় ইভেন্ট আগামীকাল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকে নিষিদ্ধ করেছে স্লোভাকিয়া। করোনার নতুন বিস্তারের মুখে জনসমাবেশের লাগাম টানতেই নেওয়া হয়েছে এমন সতর্কতাজনক পদক্ষেপ।

চেক প্রজাতন্ত্রও করোনার পুনঃপ্রাদুর্ভাবে বিশেষ সতর্কতার দিকে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। চেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোমান প্রিমুলা জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত প্রস্তাব মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করবেন। ইউরোপে বর্তমানে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের হার, তার মধ্যে অন্যতম চেক প্রজাতন্ত্র।

ইউরোপে করোনার হার মাঝে কিছুটা কমেলেও দ্বিতীয় ধাক্কার পটভূমিতে প্রায়-সব দেশই হুঁশিয়ার হয়ে গেছে। করোনা মহামারির কারণে লকডাউন দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো মেইন শিফ-৬ নামের একটি প্রমোদতরী গ্রিসের জলসীমায় প্রবেশ করলে সেটাকে ‘ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা’ জন্য রাখা হয়েছে পিরাউস বন্দরে। করা হচ্ছে আরোহী ৯২২ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। কারণ আগে সম্পন্ন পরীক্ষায় প্রমোদতরীর ১২ জন ক্রুর শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়। যদিও জাহাজে উঠার আগে যাত্রীদের কাউকেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হয়নি। এখন থেকে গ্রিসে করোনা পরীক্ষার কড়াকড়িও বাড়ানো হয়েছে।

নেদারল্যান্ডের বড় বড় শহরে মাস্ক পরতে আহ্বান জানানো হয়েছে। জারি করা হয়েছে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের এক জরুরি ঘোষণার মাধ্যমে।

করোনা বিপর্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এপ্রিলে সেখানে বিশ্বের যেকোনো একটি দেশের চেয়ে অধিক পরিমাণে করোনা সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল। ফলে গা শিউরে উঠার মতো এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয় নিউইয়র্কে । কর্তৃপক্ষ কয়েক মাসের চেষ্টায় সেই সংক্রমণ কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তোড়ে পরিস্থিতি আবার নাজুক আকার ধারণ করেছে।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কোভিড-১৯ পরীক্ষায় আবার পজিটিভের হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১.৫ ভাগ। এ রাজ্যের জন্য এটা এক উদ্বেগজনক অবস্থা। কারণ, এর আগে সেখানে এই হার ছিল শতকরা প্রায় ১ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ৪০ হাজার। দু’সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫ হাজার। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ২৭টিতে গত দু’সপ্তাহ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউইয়র্কের কিছু এলাকায় উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ। এর মধ্যে রয়েছে ব্রুকলিন ও কুইন্স প্রভৃতি প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল।

১০ লাখ মৃত্যু আর সাড়ে তিন কোটি আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আবার আতঙ্কিত করে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, অতীতের বৈশ্বিক মহামারিগুলো বিশ্বের কোটি মানুষের প্রাণ সংহার করে স্তিমিত হয়েছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল হলে পরিস্থিতি অতীতের ভয়াবতার পথে চলে যেতে পারে।

তবে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে করোনার বিরুদ্ধে অনেক বেশি আগাম সতর্কতা নেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, যা অতীতে সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারপরেও প্রায় আট-নয় মাস অতিবাহিত হলেও পাওয়া যায়নি করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী ও নিরাপদ ভ্যাকসিন। বরং ভ্যাকসিন নিয়ে বড় বড় দেশগুলোর মধ্যে চলছে তীব্র লড়াই ও উগ্র রাজনীতি। তদুপরি, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো করোনা পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জনের মতলব করছে, যা চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক ও ভঙ্গুর করে তুলেছে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD