রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

করোনায় বিপর্যস্ত দেশের ‘ফুসফুস’ প্রবাসীরা সময় এসেছে তাদের কথা ভাবার!

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০
থাইল্যান্ড প্রবাসী ব্যবসায়ী নাজির আহমেদ সরকার

নাজির আহমেদ সরকার, থাইল্যান্ড প্রবাসী : দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমি মনে করি এই প্রবাসী ভাইরা-ই দেশের অর্থনীতির ‘ফুসফুস’। তারাই দেশকে অক্সিজেন প্রদান করছেন। রাত-দিন একাকার করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের পরিবার এবং দেশের জন্য কাজ করে যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকরা আজ ভালো নেই।

করোনাভাইরাসের ভয়াল গ্রাসে আজ বিপর্যস্ত তাদের জীবনও। মধ্যপ্রাচ্যে ধুধু মরুভূমি কিংবা মালয়েশিয়ার গহীন জঙ্গলে অথবা জীবনের ঝুঁকি নেয়া রেমিটেন্স যোদ্ধারাও আজ ঘরে বসে আছেন। দেশ ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো সৈনিকেরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজ নিজেরাই বিভিন্ন সংকটে ভুগছেন।

সর্বশেষ তথ্যমতে, মালয়েশিয়া, স্পেন, ইতালিসহ কয়েকটি দেশে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের মানিএক্সঞ্জ। এমন কি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং খাবারে সংকটও দেখা দিয়েছে।
তবে আশার কথা হলো ওই সব দেশে বসবাসকারী বিত্তবান প্রবাসীরাও আজ বসে নেই। নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সকলেই এগিয়ে আসছে বিপদগ্রস্থদের সহযোগিতা করতে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মালয়েশিয়ায় প্রাবাসীদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে সে দেশেঅবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস।
এদিকে অনেক প্রবাসী শ্রমিকরা ছুটিতে দেশে এসেছেন। আবার অনেকেই করোনা ভাইরাসের আগাম বার্তা পেয়ে লম্বা ছুটি নিয়ে নিয়ে চলে এসেছেন। যারা এসেছেন তাদের অনেকেই শেষ সময়েও কর্মস্থলে ফিরে যেতে নানামুখী চেষ্টা করেছেন। কিছু মানুষ যেতে পারলেও অনেকেই যেতে পারেননি। বাধ্য হয়ে দেশেই থাকতে হচ্ছে তাদের।
কিন্তু এভাবে কত দিন? কবে ঠিক হবে এ পরিস্থিতি? দেশে এবং বিদেশে যে প্রবাসীরা আছেন সকলেই দুশ্চিন্তা করছেন। যারা দেশে আছেন তাদেরই বা সঞ্চয় কতটুকু, কিংবা যারা বিদেশে বসে আছেন তারা এভাবে আর কত দিন বসে থাকবেন? এই প্রশ্নের উত্তর কারোই জানা নেই।
তবে এখন সময় এসেছে প্রবাসীদের জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার ও দেশের জন্য খেটে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য পরিকল্পিতভাবে কিছু করার। তাদের সামাজিক এবং আর্থিকভাবে নিরাপত্তা দেয়ার। আর্থিক নিরাপত্তার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলেন না কি? না সাহায্য কিংবা অনুদান নয়। তাদের প্রেরিত অর্থ থেকেই তাদের জন্য কিছু করে দিতে হবে।

আমি কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরছি প্রবাসীদের মঙ্গলের জন্য:

১. প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের টাকা সম্পূর্ণ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধ পথে দেশে আনতে সরকারকে প্রনদনাসহ আনুষাঙ্গীক বিষয়গুলো আরো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অবৈধ পথকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

২. প্রবাসী ভাইদের প্রবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বীমার আওতায় আনা প্রয়োজন। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের প্রেরিত একটি নির্ধারিত অর্থের একটি সামান্য অংশ প্রতিমাসে সরকারের মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করা যেতে পারে। এতে কোনো প্রবাসী ও তার পরিবার র্দুসময়ে ওই অর্থ কাজে লাগাতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় দেশ এবং প্রবাসী ও প্রবাসীর পরিবার উভয়ই উপকৃত হবেন। এই বিমার আওতায় চিকিৎসা, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের দিক থাকতে পারে। এছাড়াও ৫ বছর কিংবা ১০ বছরের বিভিন্ন স্কিমে তাদের কাজের মেয়াদ শেষে এককালীন একটি বড় এ্যামাউন্ট হাতে দেয়া যেতে পারে। (যেমনটি সরকারি চাকুরিজীবিরা পেয়ে থাকেন।)

৩. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত রেমিটেন্স যোদ্ধারা সহজ শর্তে ঋণের প্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাতে প্রবাসীদের সামাজিক অবস্থা বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা আরো বেগবান হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত বছরের মার্চের তুলনায় এটি প্রায় ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৫ মাসের সর্ব নিম্ন রেমিটেন্স এসেছে গত মার্চে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মার্চে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। গত বছর একই সময় দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এদিকে মার্চের আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায়ও রেমিট্যান্স ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD