১৯৮৪ সালে ভারতের ভূপালে শিল্প কারখানা থেকে গ্যাস বিস্ফোরণে কারণে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছিল। সেই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা এখনও ফুসফুসের নানা সমস্যার কারণে মারা যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় পরিস্থিতি আরো ভয়াভহ আকার ধারণ করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিষয়ে যথাযথ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে অবহেলা ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেক করোনা রোগী।
জানা যায়, ১৯৮৪ সালের শিল্প কারখানা থেকে ক্ষতিকর মিথাইল আইসোসাইনাইট বিস্ফোরণের সেই ঘটনায় তিন হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সেই গ্যাসের কারণে আরো ২৫ হাজার মানুষের মৃতুর ঘটনা ঘটেছে।
আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, ক্ষতিকর এই গ্যাসের কারণে ওই এলাকার প্রায় সবারই ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূপালে মারা যাওয়া প্রতি ৪৫ জনের ২০ জন এই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মারা গেছেন। তবে স্থানীয় এনজিও কর্মীদের দাবি, এই সংখ্যা ৩৭ জন।
গৌরব খাতিক নামে এক স্থানীয় যুবক জানান, তার বাবা নরেশ সেই দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের একজন ছিলেন। তার ফুসুফুসে নানা রোগ দানা বেঁধেছিল। কিন্তু হাসপাতালে তার কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। অবহেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
ভূপালের মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাত্র ৩৫০টি বেড আছে, যা গত মার্চে রাজ্য সরকারের নির্দেশনায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের জন্য নতুন করে সাজানো হয়েছে।
গৌরব খাতিক বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারণ যারা গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আগে থেকেই বিভিন্ন ফুসফুসজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন, তারা এখন কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাছাড়া লকডাউনের কারণে পরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়ায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতেও বেশ ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে ৪০ মিনিটে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যাওয়া যেত, সেখানে এখন কয়েক ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত টেস্টের ব্যবস্থা নেই। এই কারণে অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও নিশ্চিত হতে পারছে না।
তিনি বলেন, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে মানুষ ছুটাছুটি করছে, শুধু পর্যাপ্ত চিকিৎসার আশায়। এ কারণে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
সমালোচকরা বলছেন, ভূপাল মেমোরিয়াল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ছাড়া কাউকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অন্যান্য হাসপাতালেও একই চিত্র লক্ষ করা গেছে।
হাসপাতালের কর্মীরা দাবি করছেন, গ্যাস বিস্ফোরণ সংক্রান্ত কারণে অসুস্থদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা তাদের হাসপাতালে নেই। যার কারণে কেউ এখানে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না।
খাতিক বলেন, ভূপালের মেমোরিয়াল হাসপাতালের এই বিভ্রান্তি সম্পর্কে আগে জানা থাকলে আমার বাবা হয়তো জীবিত থাকতেন।
আল-জাজিরা বলছে, নরেশকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করার পর তার করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণ টেস্ট করা হয়। টেস্টে পজিটিভ ফলাফল আসার কয়েক ঘণ্টা পরই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্টরা এ ধরনের ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার অবহেলা করছে। এই করোনাভাইরাসের কারণে তারা আগে থেকেই খুব বেশি ঝুঁকিতে ছিল। কিন্তু সরকার থেকে যথাযথ কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।
ভূপালের গ্রুপ অব ইনফরমেশন এন্ড একশনের অ্যাক্টিভিস্ট রাচনা ঢিংরা বলেন, আমরাও সরকারকে এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলাম যে, গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু আমাদের কথায় তারা কোনো সাড়া দেয়নি। সরকারের উচিত ছিল, ক্ষতিগ্রস্তদের সবার টেস্ট করিয়ে আলাদা করে দেয়া এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া।