বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের দাপট বিদ্যমান থাকলেও হংকং, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম তাদের দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশগুলো অন্যদের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, ভিয়েতনাম সরকারের প্রশংসা না করলেই নয়। কারণ দেশটিতে কিছু লোক আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। চলুন দেখে নেই, দেশটি কীভাবে ভয়ংকর এই মহামারিতেও মৃত্যু শূন্যের কোটায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ভিয়েতনামের মোট জনসংখ্যা ৯ কোটি ৭০ লাখ। এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও দেশটিতে মাত্র ৩২৮ জন করোনাভাইরাসে আকারন্ত হয়েছে। এখন পর্যন সেখানে কারো মৃত্যুও হয়নি। দেশটি চীনের সীমান্ত ঘেঁষা এবং সেখান থেকে অনেক মানুষ যাতায়াত করে। তবুও তারা এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সক্ষম হয়েছে।
সিএনএন বলছে, ভিয়েতনাম একটি উন্নয়নশীল দেশ। চিকিৎসাব্যবস্থাও তেমন উন্নত না। দেশটির প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র আট জন চিকিৎসক।
গত এপ্রিলেই তারা তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউন উঠিয়ে নেয়। এরপর থেকে আজ ৪০ দিন পর্যন্ত সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে মানুষের জীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
ভিয়েতনামের সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক থাওয়েইতেস বলেন, আমি দৈনিক করোনা ওয়ার্ডে যাই। রোগীদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। আমি জানি, আক্রান্তদের কেউ মারা যায়নি।
তিনি বলেন, যদি কমিউনিটি সংক্রমণ হতো তাহলে প্রতিদিন আমাদের এখানে রোগী আসতো। হাসপাতালে না আসলেও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে অনেক মৃত্যুর খবর আমাদের কানে আসতো। এর একটিও হয়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশটি মুক্ত হয়ে যাওয়ার কিছু কারণ খুঁজে বের করেছে মার্কিন প্রভাবশালী সিএনএন। যার বিশ্লেষণও তারা করেছে।
দ্রুত পদক্ষেপ
প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার আগেই ভিয়েতনাম সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনা সরকার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কোনো তথ্য প্রচার হওয়ার আগেই তারা জনগণকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দেয়।
সেইসঙ্গে বাইরে থেকে যারা ভিয়েতনামে প্রবেশ করে তাদের তাপমাত্রা মাপার পাশাপাশি সবার থেকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়।
আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা
প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরই তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়। এর মাধ্যমে কমিউনিটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে দেশটি। সেইসঙ্গে টেস্টের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেয়। যাদের সন্দেহভাজন মনে হয়েছে তাদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
যেসব হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড হয়েছে সেসব হাসপাতালের সংস্পর্শে আসা ১০ হাজার মানুষ ও এক হাজার স্বাস্থ্যকর্মীরও টেস্ট ও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
গণযোগাযোগ ও প্রচারণা
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকার থেকে মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর থেকে বাঁচতে কী কী করা লাগবে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
সরকার থেকে কার্যকর একটি হটলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যেখানে দৈনিক ২০ হাজার কল ট্র্যাক করা সম্ভব হয়েছিল।
এসব কারণ পর্যালোচনা করে সিএনএন বলছে, ভিয়েতনামের জনগণ করোনাভাইরাসকে বেশ সতর্কতার সঙ্গেই নিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন ইউরোপ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যা করতে পারেনি।
লাইট নিউজ/আই