শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

করোনা যেভাবে ঠেকাল এশিয়ার ৩ দেশ

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০
People wearing face masks to help protect against the spread of the new coronavirus wait to cast their early votes for the upcoming parliamentary election at a polling station in Seoul, South Korea, Friday, April 10, 2020. The elections will be held on April 15 at about 14,300 polling stations all over the nation to pick lawmakers. The new coronavirus causes mild or moderate symptoms for most people, but for some, especially older adults and people with existing health problems, it can cause more severe illness or death. (AP Photo/Ahn Young-joon)

কয়েক মাস আগেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় একটা অংশে করোনা কঠোর আঘাত এনেছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস যেন দেশটির নববর্ষ উপলক্ষে আরও ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ছড়িয়ে পড়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে ছিল থাইল্যান্ড। কারণ, উহান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নানা কাজে থাইল্যান্ড যান। তবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থেকেও অদ্ভুতভাবে এই ভাইরাসের মোকাবিলা বেশ সফলভাবেই করেছে থাইল্যান্ড। শুধু তা–ই নয়, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামও এই ভাইরাস মোকাবিলায় অন্যতম সফল দেশের তালিকায় নাম উঠিয়েছে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জানুয়ারির শেষে থাইল্যান্ডের অবস্থান ছিল সংক্রমণের দিক দিয়ে চীনের পরেই। উহান থেকে পাওয়া বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তায় মানুষ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালগুলোয় অসুস্থ মানুষের ভিড়। এসব ফুটেজ সারা বিশ্বের মানুষকে শঙ্কিত করেছিল এই জন্য যে কীভাবে বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা দিয়ে তারা এর মোকাবিলা করবে। ভাইরাসটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বিশেষত ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ভালোই আঘাত হানে। সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মৃত্যু ও বিপর্যয় দুটোই দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ এখনো প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লড়াই করে যাচ্ছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোয় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ংকর আশঙ্কা এড়ানো গেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মালয়েশিয়া ১২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। প্রশংসনীয় হয়েছে ভিয়েতনামের নেওয়া পদক্ষেপ। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনেরও মৃত্যু হয়নি। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক ডেল ফিশার বলেন, এসব দেশের এই সাফল্যের মূল কারণ জনসচেতনতা। মানুষের জন্য পরিষ্কার একটি বার্তার প্রয়োজন ছিল, তা তারা দিতে পেরেছে। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশে যদি দুর্বল নেতৃত্ব থাকে, তাহলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। কী করবে এবং কাকে বিশ্বাস করবে, এ নিয়ে তারা নিশ্চিত নয়। তাই অবজ্ঞার একটা মনোভাব চলে আসে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০২ সালে সার্স মহামারির পর স্বাস্থ্য খাতকে দ্রুত কাজ করার বিষয়ে এশিয়ার অনেক দেশই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই এ ধরনের মহামারি ঠেকাতে এবার তারা এমন অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। কম্বোডিয়ায় ২ হাজার ৯০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিজুড়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠেও নেমেছে তারা। কম্বোডিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি (ডব্লিউএইচও) লি আইলান বলেন, তারা দ্রুত শনাক্তকরণ এবং যোগাযোগ কার্যকর করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ১০ লাখের বেশি গ্রাম স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবী সম্প্রদায়গুলোর ওপর সর্বদা নজর রেখেছিল।

ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই করোনা ঠেকানোর করণীয় নিয়ে আলোচনায় বসেছিল মালয়েশিয়ার সরকার। ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগারগুলোয় প্রয়োজনীয় কিটের জন্য দ্রুত ফরমাশ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বড় আকারের প্রকোপ হলে হাসপাতাল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সব মানুষকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এমনকি সাধারণ শ্বাসকষ্টের রোগীকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসব দেশ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার মতো গণপরীক্ষামূলক পদক্ষেপ নেয়নি। বরং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর দৃষ্টি রেখেছিল। যেসব এলাকায় করোনা রোগী পাওয়া গিয়েছিল, কেবল সেখানে ব্যাপক হারে পরীক্ষা করেছে। অবশ্য একটা কথা বলা হয় যে পরীক্ষা কম করলে ধরাও পড়ে কম। কম্বোডিয়ায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১২৬ জনের। এসব মানুষের বেশির ভাগই বাইরে ভ্রমণ করেছিলেন।

কম্বোডিয়া কিন্তু প্রথমে কিছুটা ভুলও করে। কম্বোডিয়া সরকার হুন সেন প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসের প্রভাবকে নিচু করে দেখিয়েছিলেন। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর তেমন নজর রাখেনি। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ৪০ হাজার ১৯৭ জনের মধ্যে বেশির ভাগই অভিবাসী শ্রমিক। এদিক দিয়ে এগিয়ে মালয়েশিয়া। প্রথম থেকেই তারা বিষয়টি পুরোপুরি স্বাস্থ্যগতভাবেই মোকাবিলা করতে চেয়েছে, রাজনৈতিকভাবে নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন টিভিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে গরম পানি পান করা একটি নিরাময়, তখন তাঁর এই মন্তব্য স্বাস্থ্য মহাপরিচালক নুর হিশাম দ্রুত বাতিল করে দেন। একটি স্পষ্ট বিরোধ তৈরি হলেও তা সবার জন্য মঙ্গলই এনেছে।

একইভাবে মালয়েশিয়ার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী নুর আজমি গাজালিকে যখন কঠোর লকডাউন ভাঙার জন্য জরিমানা করা হয়, তখন তা জনসাধারণকে একটি শক্ত বার্তায় দেয়। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে মালয়েশিয়া। এক পরিবার থেকে কেবল একজন মানুষ বের হতে পারবেন। তাও কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য। এমনকি দৈনন্দিন শরীরচর্চার জন্যও মানুষকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বলা হচ্ছিল যে তাপ বা আর্দ্রতা সংক্রমণকে ধীর করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর কোনো প্রমাণ নেই। তাই এ বিষয়ের ওপর তেমন গুরুত্বারোপ করেনি দেশগুলো। বরং মোকাবিলা করতে পদক্ষেপ নিয়েই গেছে।
লাইট নিউজ

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD