হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পরপরই সংগঠনের আমির কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকা না চট্টগ্রামে থেকেই নির্বাচিত হবেন হেফাজতের আমির, তা নিয়েও সংগঠনের ভেতর আলোচনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর হেফাজতের এক সিনিয়র নেতা (শনিবার দুপুরে) হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বলেন, ‘সহ-সভাপতিদের মধ্য থেকে যে কেউ হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।’
জানা গেছে, হেফাজতের আমির আল্লাম শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনের এক নম্বর সহ-সভাপতির ভারপ্রাপ্ত আমির হওয়ার কথা। বর্তমানে এক নম্বর সহ-সভাপতি হচ্ছেন আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বয়সেও সবার বড়। তাকেই হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে আপাতত নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদি তিনি দায়িত্ব নিতে অপারগ হন, তাহলে সহ-সভাপতিদের মধ্য থেকে যে কাউকেই ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে দেখা যেতে পারে। তবে, আল্লামা শফীর দাফনের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে হেফাজতের নেতারা জরুরি বৈঠক করে ভারপ্রাপ্ত আমিরের বিষয়টি নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
হেফাজতের এক নেতা জানান, সংগঠনের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ছাড়াও সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমিকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এছাড়া, ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে, সংশ্লিষ্টদের ধারণা, হেফাজত নেতাদের কোন্দল-গ্রুপিংয়ের কারণে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে জরুরি কাউন্সিলও করতে পারে সংগঠনটি। এক্ষেত্রে কাউন্সিলে সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বলেন, ‘আমিরের মৃত্যুর পর এই বিষয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থাও আমাদের কারও নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার অভিমতের ভিত্তিতে বিষয়টি ফয়সালা করা হবে।’
জানা গেছে, আল্লামা শফীর মৃত্যুর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রকশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে হেফাজতে ইসলাম।
সংগঠনটির দুই গ্রুপই নিজেদের শীর্ষ নেতাদের হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বে আশা করছেন।
তাদের মধ্যে একগ্রুপ আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানির নেতৃত্বে রয়েছেন। এই গ্রুপে রয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মহিউদ্দিন রুহি প্রমুখ।
অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী। মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মামুনুল হকসহ কওমি ঘরানার অধিকাংশ আলেম ওলামা ও হেফাজতের অধিকাংশ নেতাকর্মী রয়েছেন।
সংগঠনটির দুই গ্রুপই চাইছেন তাদের শীর্ষ নেতারাই হেফাজতের নেতৃত্বে আসুক। তবে, নিয়ম অনুযায়ী হেফাজতের এক নম্বর সহ-সভাপতি ভারপ্রাপ্ত আমির হওয়ার কথা। তবে সহ-সভাপতিদের মধ্য থেকে ভারপ্রাপ্ত্ আমির নির্বাচনে মতানৈক্য দেখা গেলে জরুরি ভিত্তিতে হেফাজতের কাউন্সিল ডাকা হতে পারে। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন আমির নির্বাচন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সংগঠনটির বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকেও হেফাজতের আমির হিসেবে দেখা যেতে পারে। বর্তমানে বিবাদমান হেফাজত নেতারা আপাতত তাদের আমিরকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান। আল্লামা শফীর জানাজা, দাফন ও কাফন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তারা।
নতুন আমির নির্বাচন প্রসঙ্গে একদিন আগে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের জানান, আল্লামা শফীর মৃত্যুতে হেফাজতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাউন্সিলের মাধ্যমে হেফাজতের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে কওমি ঘরানার বৃহত্তম অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গড়ে তুলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কওমি ঘরানার সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলকে এক ব্যানারে নিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি। ১৩ দফা দাবি দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ ও রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে আলোচনায় আসেন আল্লামা শফী। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে খবরের শিরোনাম হন। পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কওমি সনদের স্বীকৃতি আদায় করেন তিনি।
লাইটনিউজ