রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

জিংকের ঘাটতি পূরণে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ চাষে ব্যাপক প্রস্তুতি

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সারা দেশে জিংক সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ চাষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীক জিংক সমৃদ্ধ এ জাতটি উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই)। যা তাদের উদ্ভাবিত ৬টি জাতের মধ্যে অন্যতম।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) কমলারঞ্জন দাস বলেন, দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পুষ্টি সমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। গবেষণার মাধ্যমে তারা বেশ কিছু জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে গুণগত মানের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০। এই ধান সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী করা চলছে।

এ বিষয়ে বিআরআরআই এর পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের গবেষকরা বিভিন্ন সময়ে মোট ৬টি জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো- ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান ৬৪, ব্রি ধান ৭২, ব্রি ধান ৭৪, ব্রি ধান ৮৪ এবং বঙ্গবন্ধু ১০০। তবে এগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতটি অন্যদের তুলনায় উৎকৃষ্ট। মান ও উৎপাদনের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় এটি সারা দেশে সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রদর্শনী প্লট তৈরির কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ বোরো মৌসুমের একটি জাত। জাতটি ২০০৬ সালে সংকরায়ণ করা হয় । পরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে ৫ বৎসর ফলন পরীক্ষা করা হয়। ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কতৃক ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ছাড়করণ করা হয়।

বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য এ ধানে বিদ্যমান। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে আকার আকৃতি ব্রি ধান ৭৪ এর মতো। ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০১ সেমি, ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ১৬.৭ গ্রাম। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা, জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মি গ্রাম/কেজি, চালে অ্যামাইলোজ ২৬.৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ৭.৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ জাতের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে এই গবেষক বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এর জীবনকাল ১৪৮ দিন যা ব্রি ধান ৭৪ এর প্রায় সমান। গড় ফলন ৭.৭ টন/ হেক্টর। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। এ জাতের ফলন ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে সামান্য বেশি (৪.৫শতাংশ), ধানের গুণগত মান ভাল অর্থাৎ চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং ব্রি ধান ৮৪ এর চেয়ে ফলন প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। তাছাড়া জাতটিতে জিংকের পরিমাণ (২৫.৭ মি.গ্রাম/কেজি) ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে বেশি (২৪.২মি.গ্রাম/কেজি)। যা জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। দেশের যে সকল অঞ্চলে বোরো মৌসুমে জিরা নামক জাতের চাষাবাদ করা হয় সেসব অঞ্চলে জাতটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে বলেও তিনি আশা করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনার আলোকে সারা দেশে এই বঙ্গবন্ধু ১০০ ধানের জাতটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একদিকে এটি দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করবে অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের সকল জেলায় কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে কৃষকদের জন্য প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এ ধানের ব্যাপক পরিচিতির জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলা প্রদর্শনী প্লাট কারার কর্মচূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষের দেহে জিংকের ঘাটতি রয়েছে। এই সমস্যাটিকে শারীরিক সমস্যার মাঝে পাঁচ নম্বরে রয়েছে। কারণ শরীরে জিংকের ঘাটতির ফলে দেখা দিতে পারে নানা রোগ। যা শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষেরই হতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জিংক তথা জিংক সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। জিংককে বলা হয়ে থাকে শরীরের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। মানব শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু, হাড় ও তরলে জিংকের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা জানান, মগজ বা ব্রেনের কার্যকারিতা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে জিংক খুবই জরুরি একটি উপাদান। মগজের কোষে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে মগজের কার্যক্ষমতা শ্লথ হয়ে যায়। শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমেই তার প্রভাব দেখা দেয় নিউরোলজিক্যাল ক্ষেত্রে। শিশুদের ক্ষেত্রে মনোযোগে সমস্যা দেখা দেয়। বয়স্কদের মাঝেই অমনোযোগিতার প্রভাব দেখা দেয়।

বিশেষ করে শরীরে জিংকের উপস্থিতি কমে গেলে বা অভাব হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যাওয়া, পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরে জিংকের মাত্রা ঠিক থাকলে টি-সেল উৎপাদন সঠিক মাত্রায় থাকে। হরমোন রিসেপ্টরের জন্যেও জিংকের প্রয়োজন হয়। এই সকল কিছু সম্মিলিতভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বজায় রাখে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২ মিলিয়ন শিশু ক্রমাগত ডায়রিয়ার সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তাদের বেশিরভাগ জিংকের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও অ্যালার্জি ও থাইরয়েডের সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD