পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরির অপরাধে গত চার মাস আগে মালি রবিউলকে সাময়িক বরখাস্তের জেরেই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইউএনওর ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের বাগানের মালি রবিউলকে গ্রেপ্তার করার পর সে স্বীকার করেছে, ৫০ হাজার টাকা চুরির অপরাধে গত চার মাস আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন ইউএনও। এর প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পনা করে ইউএনওর উপর হামলা চালানো হয়।
সংশ্লিষ্ট ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে দিনাজপুরের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আসামি রবিউলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে আদালত তার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন- ইউএনওর ওপর হামলায় ব্যবহার করা মই ও হাতুড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। যাদেরকে সন্দেহ করেছি, তাদেরকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। রবিউল নামের যে আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, সে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বেশ কিছু আলামত জব্দ করেছি। আসামি ও আলামত, সংগ্রহ করা সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে আমরা মিলিয়ে দেখেছি। গ্রেপ্তারের পর আমরা তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করে রিমান্ডে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছি। এখন তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং ঘটনার বিষয় বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করবো।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে ঘরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ইউএনও ওয়াহিদা খানম এবং তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায়। পরের দিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর কমিউনিটি হাসপাতাল থেকে ওয়াহিদাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে আজ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে চিকিৎসাধীন ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় অস্ত্রোপচারের সেলাই কাটা হয়েছে। তার শরীরের অবশ থাকা ডান পাশেরও উন্নতি হয়েছে। তিনি ডান হাতের কনুই পর্যন্ত তুলতে ও নাড়তে পারছেন। তবে, তিনি এখনও ডান পা নাড়াতে পারছেন না। হাসপাতালের নিউরোট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওই হামলার ঘটনায় বোনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা দুইজনকে আসামি করে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ। মামলার তদন্তকাজ এখনো চলছে।
লাইটনিউজ