গাইবান্ধা জেলার, সাদুল্লাপুর উপজেলার খুবই সাধারণ একটা ইউনিয়ন ‘নলডাঙ্গা’। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ইতিহাসে গৌরবময় এই এলাকার শিক্ষার মান অন্য দশটি এলাকার থেকে অনেক বেশি। অবস্থানগত কারণে পার্শ্ববর্তি সুন্দরগঞ্জ এবং সাদুল্লাপুর উপজেলার মানুষ সব সময়-ই এখানে যাতায়াত করেন। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়তই এখান থেকেই ট্রেন যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়ত করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য খুব সাধারণ এই মানুষগুলোর প্রায় দশ বছরের দাবী আজও পর্যন্ত মেনে নেয়া হয়নি।
মাননীয় মন্ত্রী, অত্র এলাকার মানুষ নতুন কোনো ট্রেনের দাবী করেনি। কিংবা সকল আন্তঃনগর এক্সপ্রেসের দাবী করেনি। প্রতিদিন শত শত মানুষের ভোগান্তি ছাড়া কর্মস্থলে যোগ দিতে কিংবা বাড়ি ফিরতে একটা এক্সপ্রেস ট্রেনের (রংপুর এক্সপ্রেসের) মাত্র ২ মিনিট যাত্রা বিরতি চেয়েছেন। এটা কি লাখ লাখ মানুষের জন্য অনৈতিক দাবী?
গত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নলডাঙ্গার মানুষ মাত্র ২ মিনিটের জন্য সব ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে আবার কখনো রোদে পুড়ে। কখনো কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালে কিংবা গভীর রাতের ঘন অন্ধকারে মশাল হাতে একটাই দাবী করেছে গত প্রায় ১০ বছর থেকে।
২০১১ সালে রংপুরে যাত্রাকালে জনসাধারণে গণ দাবীর মুখে তৎকালীন মহাপরিচালক আবু তাহের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরবর্তিতে তার মেয়াদকালে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো জনগণকে প্রতিহত করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেন। সেই সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছেন। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মামলাও দায়ের করা হয়। সেখানে অনেক মান্যগন্য ব্যক্তিকে আসামী করা হয়। পরিবর্তিতে গত ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সাহেবের সাথে স্টপেজের ব্যবপারটি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়। তার পদত্যাগের আগেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। শুধু তাই নয়, সৈয়দ আবুল হোসেনের পরবর্তি তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেবকেও ব্যাপারটি অবহিত করা হয়েছিল। সে সময় রেলওয়ের মহাপরিচালক আবু তাহেরও উপস্থিতি ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই দাবী আজ প্রায় ১০ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি।
মাননীয় মন্ত্রী, মাত্র ২ মিনিটের স্টপেজ দাবী করা স্টেশনটি ২০১১ সালেই ক্লোজ ডাউন করে দেয়া হয়। উঠতি অর্থনীতির একটা সম্ভবনাময় ভবিষ্যৎকে ঠেকে দেয়া হয় অন্ধকারের দিকে। শুধু মাত্র একটা দাবির কারণে পুরো সিস্টেমকেই বন্ধ ঘোষণা করা কি ন্যায় সঙ্গত? তাদের মামলা দিয়ে কি দমনের চেষ্টা করা ন্যয় সঙ্গত।
মাননীয় মন্ত্রী ২০০৫ সালের ২০ মার্চের প্রলয়কারী টর্ণেডোর পর এই এলাকার মানুষকে ঘুড়ে দাঁড়াতে অনেকটা সময় লেগেছে। দুর্যোগে সব কিছু হারানো এই মানুষগুলোর আর কিছু হারানোর ভয় নেই। শুধু মাত্র একটা স্টপেজের দাবীতে নিজের বুক পেতে দিয়ে ছিল রেল লাইনে। সেদিনের সেই অন্ধকার রাতে মারতে মরতে বেঁচে গেছে শত শত মানুষ।
বহু নাটকীতার পর শেষ পর্যন্ত গত ৯ বছর রংপুর এক্সপ্রেস দাড়ালো। কিন্তু এর ডান পাশে ব্র্যাকেটে লিখা ‘আন অফিসিয়াল স্টপেজ’! কিন্তু করোনার মহামীরর পর যখন সব কিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করলো তখনই এই এলাকার মানুষের সেই অধিকার টুকুও কেড়ে নেয়া হলো। স্টপেজ বন্ধ করা হলো। মাননীয় মন্ত্রী, অসহয় এই মানুষগুলোর দাবী কি করলে পুরণ হবে তা আমার বোধগম্য নয়।
কেন নলডাঙ্গা স্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস বা আন্তঃনগর ট্রেন দাঁড়াবে তার উদহারণ তুলে ধরছি: নলডাঙ্গা স্টেশনটি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলাধীন একটি বি-ক্লাস স্টেশন। এর দক্ষিণে কামারপাড়া স্টেশন ও উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলাধীন বামনডাঙ্গা স্টেশন। উল্লেখ্য, বামনডাঙ্গা স্টেশন থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব মাত্র ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার।
মাননীয় মন্ত্রী, ২ নং নলডাঙ্গা ইউনিয়নের খুব সাধারণ এই মানুষগুলোর দুঃখ-দুর্দশার কথা একবার ভেবে দেখবেন। আপনি নিজেও উত্তরঙ্গের মানুষ। তাই আপনার কাছে আমাদের দাবীটা আরো বেশি। অফিসিয়াল ভাবে স্টপেজ দিয়ে এই স্টেশনের ক্লোজ ডাউন তুলে নিয়ে মামলাটি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করুণ।
ইমরুল কাওসার ইমন
সাংগঠনিক সম্পাদক
রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা।