৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। এ দিবস সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। বছরের ৩৬৫ দিন। শুধু মাত্র এই একটি দিন আলাদা করে নারীদের জন্যই রাখা হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই ঠিক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে দিনটি নানা ঘনাঘটার মধ্য দিয়ে আয়োজিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘আমি প্রজন্মের সমতা: নারী অধিকারের প্রতি সচেতনতা’। আর বাংলাদেশে সরকার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’।
প্রিয় পাঠক নারী দিবস নিয়ে যেহেতু বলতেছি তাহলে নারী দিবস কি ভাবে এলো এ সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। উইকিপিডিয়া তথ্য মতে ‘১৮৫৭ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা কাজ করত। তাদেরকে দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রম দিয়ে কাজ করানো হতো। ৮ই মার্চ দিনে দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন।
আন্দোলন করার অপরাধে সে সময় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।
১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
গত ২৫ বছর ধরে অনেক আকর্ষণীয় প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে।বাস্তবে এর কোনোটিই সফলতার মুখ দেখেছে কি.?এ বিষয়ে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়।
একটি কথা সত্য যে নারী বরাবরের মতোই অধিকারবঞ্চিত, ক্ষেত্রবিশেষে অধিকতর হয়েছে। এর কারণ হল, আমাদের মননে যা ক্রিয়াশীল তা হল নারীকে বাঁচিয়ে রাখা, অধিকার দেয়া নয়। এ সমাজে নারীরা শারীরিকভাবে যতটা না নির্যাতিত তার চেয়ে ঢের বেশি হয় মানসিক নির্যাতনের শিকার। পদে পদে তাকে অপমান সইতে হয়। লজ্জার কথা হল, এ সমাজে এখনও আমরা নারীকে ‘মেয়েলোকের’ বেশি ভাবতে পারিনি।
আমরা পুরুষরা অনেকেই মনে করি পুরুষরা বাইরের কাজ করবে এবং মেয়েরা ঘরের কাজ বা গৃহস্থালি কাজ করবে।আমরা এই ধারণায় থাকি বলে নারী প্রতি এ বৈষম্য প্রবল হচ্ছে। সরাসরি আর্থিক লেনদেন না থাকায় আমরা গৃহস্থালির কাজকে গুরুত্বের সাথে দেখি না। অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৫ এর মতে, দেশে ১ কোটির ও অধিক নারী দৈনিক ১৬ ঘন্টা করে গৃহস্থালীর কাজ করে, যার অর্থিক মূল্য হিসাব করলে কয়েক হাজার কোটি ডলারে দাড়াঁবে। এতো গেলে নারীদের শ্রমের কথা।
আমাদের একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একটি বাদ রেখে একটি অগ্রসর করা সম্ভব নয়। দুইটিকে সমানভাবে গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করতে হবে। তা না হলে এজাতি সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে না। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদির শিকার হচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রেই নারীরা নিরাপদ নয়। এ থেকে বাঁচতে হলে নারীদের পাশে দাড়াতে হবে। তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তদের নিরাপত্তা দিতে হবে। মোট কথায় তাদের সমঅধিকার ব্যাপারে কাজ করতে হবে।তাহলে নারীরা এগিয়ে যাবে।
লেখক
আসমাউল মুত্তাকিন
শিক্ষার্থী
জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
লাইটনিউজ/এসআই