বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:২০ অপরাহ্ন

পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপি লকডাউন শুরু

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৫৫ রেড জোনে পর্যায়ক্রমে লকডাউন শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে কালীগঞ্জ, মাধবদীর বিরামপুর এবং পলাশের চরসুন্দরে লকডাউন শুরু হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের আরও এলাকা অবরুদ্ধ হবে।

লোকবল স্বল্পতায় সব একসঙ্গে নয়, ধাপে ধাপে এটা কার্যকর হবে। একাধিক এলাকা নিয়ে শুরু হবে এর কার্যক্রম । কোন জোনে কবে থেকে শুরু হবে তা কৌশলগত কারণে আগাম প্রকাশ করা হবে না।

সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হবে। আজ মধ্যরাত থেকে আরও একাধিক এলাকায় লকডাউন কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে। অবরুদ্ধ এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে।

সংক্রমণের ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫টি এবং চট্টগ্রাম সিটির ১০টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে।

এছাড়া নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার একাধিক উপজেলা আছে রেড জোনের তালিকায়। কার্যকর হলে এসব এলাকায় ১৪ থেকে ২১ দিন লকডাউন থাকবে।

করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি গত শনিবার বৈঠকে বসে এসব এলাকা চিহ্নিত করে। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ঢাকার এলাকাগুলোতে আমরা সহযোগিতা করছি। কিন্তু নির্দেশনা হচ্ছে, সিভিল সার্জনরা নিজেরাই ঘোষণা করবেন।

আমরা তাদের সহযোগিতা করব। এটা স্থানীয়ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, লকডাউন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তবে সেটি বাস্তবায়নে অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতর জড়িত। তাই এককভাবে কারও পক্ষে কোনো এলাকা লকডাউন করা সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, সোমবার মধ্যরাত থেকে রেড জোন চিহ্নিত এলাকাগুলোতে লকডাউন শুরু হবে। তবে সব এলাকা একসঙ্গে নয়, পর্যায়ক্রমে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে এসব এলাকা লকডাউন করা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটির চিহ্নিত রেড জোন

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হল- বসুন্ধরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা ও মিরপুর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির চিহ্নিত রেড জোন

দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেণ্ডারিয়া, ধানমণ্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচা।

চট্টগ্রাম সিটির চিহ্নিত রেড জোন

এলাকাগুলো হল- ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১৬ নম্বর চকবাজার, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার, ২১ নম্বর জামালখান, ২২ নম্বর এনায়েতবাজার, ১৪ নম্বর লালখানবাজার ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড ।

আরও তিন জেলা

ঢাকার বাইরের তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সব উপজেলাকে রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে। নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী, পলাশ এলাকা। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। টেকনিক্যাল কমিটি যে তালিকা চূড়ান্ত করেছে তা বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার মিলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে রেড জোন চিহ্নিত করবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে ১৩ জুন অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বলা হয়েছে- গত ১৪ দিনে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার ভেতর ৬০ জন রোগী থাকার ভিত্তিতে এই রেড জোন ঘোষণা করা হচ্ছে।

এটা শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য প্রযোজ্য। বাকি জেলাগুলোতে ১৪ দিনের ভেতরে ১ লাখ জনসংখ্যার ১০ জন থাকলে সেটাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন এলাকার কোন অঞ্চলকে রেড জোন করা হবে। পুরো অঞ্চলকে লকডাউন করা সম্ভব না। যে পয়েন্টে রোগীর সংখ্যা বেশি সেটিকে চিহ্নিত করা হবে।

সিভিল সার্জন বলেন, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে এখন সংক্রমণ বাড়ছে। তবে সিটি এবং সদরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ তাদের এলাকায় রেড জোন চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করবে। এছাড়া তারা স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন।

জানা গেছে, রেড জোন ঘোষণা করা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে মানুষ নিজেদের সুবিধার জন্য অন্য এলাকায় চলে যান। বিশেষ করে ভাসমান লোকজন দ্রুত লকডাউন এলাকা ছেড়ে দেন। এছাড়া চাকরিজীবীদের কেউ কেউ অন্য এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। কোনো রেড জোনেই সব লোকের করোনা পরীক্ষা সম্ভব হয় না।

পরীক্ষার বাইরে আছেন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু তাদের কোনো উপসর্গ নেই। তারা জানে না নিজেরা আক্রান্ত। এ পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ হওয়ার ভয়ে অন্য এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় চলে যাচ্ছেন। তারাই মূলত সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করছেন।

এভাবে যাতে কেউ এলাকা ছাড়তে না পারেন, সেজন্য আগাম কোনো ঘোষণা দেয়া হবে না। নির্দিষ্ট এলাকায় সন্ধ্যায় মাইকিং করে অবরুদ্ধের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। অবরুদ্ধ এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। ফলে সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মরত কাউকে অফিসের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হবে না।

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজারে ৯ জুন রাত ১২টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ দিন পার করেছেন এলাকাবাসী। অবরুদ্ধ করার পর করোনায় এলাকাটির এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের দশটি এলাকা রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বী।

তিনি রোববার রাতে বলেন, ‘রেড জোনগুলো চিহ্নিত করে সিটি মেয়রের কাছে তালিকা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র সাহেব পরবর্তীতে বিস্তারিত জানাবেন। নীতিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রেড জোনগুলো ঠিক করে দেয়া হয়েছে।’ এসব এলাকা লকডাউনের আওতায় আসবে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সব এলাকা একসঙ্গে নয়, পর্যায়ক্রমে লকডাউন কার্যকর করা হবে।

লাইটনিউজ/এসআই

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD