বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

পারিবারিক কবরস্থানে শেষ ঠাঁইটুকুও হলো না তাঁর

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০

শ্বাসকষ্টে এক কলেজশিক্ষকের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের রাউজানে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর ঠাঁইটুকুও হলো না। বাড়ি এবং গ্রামের লোকজনের বাধার মুখে তাঁকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গুনিয়ার পূর্ব সৈয়দ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মৃত কলেজশিক্ষকেরে নাম মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৫৮)। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার দিকে তিনি রাঙ্গুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। তিনি রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দা সেলিমা কাদের চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। কয়েক দিন ধরে তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাঁয়। এরপর গুরুতর অবস্থায় তাঁকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তিনি মারা যান।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আনোয়ারুল ইসলামের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে পরিবারের সদস্যরা গ্রামের বাড়ি রাউজানের নোয়াপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকে বাড়ি ও গ্রামের লোকজন জড়ো হয়। লাশ পৌঁছলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামের মানুষ। কোনো অবস্থায় এই কলেজ শিক্ষকের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয় গ্রামের লোকজন। সেখানে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন ওই শিক্ষকের স্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে এবং কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে। বাড়ি ও গ্রামের মানুষের বাধা পেয়ে একই অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আনোয়ারুল ইসলামকে পূর্ব সৈয়দ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মৃত কলেজশিক্ষকের কনিষ্ঠ ছেলে মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘শ্বাসকষ্টে বাবা বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে মারা যান। সাড়ে নয়টায় লাশ নিয়ে আমরা রাউজানের গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখোনে বাড়ি ও গ্রামের লোকজন আমার বাবার মুখ তো দেখেনি, কবর দিতেও বাধা দেয়। অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দুই ঘণ্টা পর আমরা লাশ নিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় ফিরে যাই। সেখানে প্রশাসনের সহযোগিতায় বাবাকে দাফন করা হয়।’

কবর দিতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে আনিসুল বলেন, গ্রামের লোকজন আমার বাবাকে করোনা রোগী মনে করেছে। এ জন্য কেউ লাশের কাছে আসেনি। অনেক দূর থেকে তাঁরা বাধা দেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দবাড়ির কবরস্থানে পৗঁছায়। রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ও গাউছিয়া কমিটির সদস্যরা লাশ দাফনে এগিয়ে আসে। এলাকার কিছু তরুণ তাঁর কবর খুঁড়ে দেয়। আজ শুক্রবার ভোরের দিকে তাঁর দাফন কাজ শেষ হয়।

রাউজানের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে জানান, মৃত আনোয়ারুল ইসলাম সোমবার থেকে চিকিৎসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। মুঠোফোনে তিনি ওই শিক্ষককে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আসলে সোমবার থেকে আনোয়ারুল ইসলাম শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শুরুতেই অক্সিজেন পেলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারতেন।’

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD