রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব বলা যায় না: জাপা

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। তার দাবি— পরোক্ষ করের কারণে জনগণের মাথায় বোঝা বাড়বে। জনগণের মুক্তির উপায় নেই।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ঘোষণার পর বাজেট প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, এই বাজেটকে জনবান্ধব বলা যায় না। পরোক্ষ করের কারণে জনগণের মাথায় করের বোঝা বাড়বে। জনগণের মুক্তির উপায় নেই। পরিবেশের অভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বড়বে না, তাতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে না। এই বাজেটের পরে দেশ একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে।

তিনি বলেন, বাজেট হয়েছে গতানুগতিক। গেল কয়েক বছর যা হয়েছে, তার বাইরে বিশেষ কিছু নেই। দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যস্ফীতি, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আছে বেকার সমস্যা। বৈদেশিক মুদ্রা যা আয় করছি, ব্যয় হচ্ছে তা চেয়েও বেশি। রিজার্ভ প্রতিদিন কমছে।
এতে আমাদের টাকার দাম কমছে। এগুলো উত্তরণের কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগ এই বাজেটে লাখ্য করছি না। বাজেটের আকার করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। ব্যয়ের চেয়ে আয় হচ্ছে অনেক কম। রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি। ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঘাটতি হচ্ছে। ঘাটতি মেটানো হচ্ছে দেশি ও বিদেশি ঋণ দিয়ে।

তিনি আরও বলেন, ঋণ নিয়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে। ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি বৈদেশিক ঋণ থেকে সুদ দেওয়ার পরে আমরা ব্যবহার করতে পারছি ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ করতে হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ও ঋণ নিয়ে করা
হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন ঋণ করা হচ্ছে তার সুদ ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে হবে। ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে। ৬২ শতাংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর বাকিটা পরোক্ষে কর। এতে সাধারণ মানুষের ওপর করোর বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আয়কর মাত্র ৩৬ ভাগ, আমদানী শুল্ক ১০ দশমিক ৩, মূল্য সংযোজন কর ৩৮ দশমিক ১ এবং সমপূরক শুল্ক ১৩ দশমিক ৮ শতাংম— এটা রিকশাচালক এবং ভিক্ষুকদেরও দিতে হবে। গরিব মানুষদের বাঁচানোর জন্য কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ছে না। হতদরিদ্র মানুষের জন্য যেটুকু দেওয়া হয় তা নিয়ে বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। অপচয় এবং দুর্নীতির মাধ্যমে যারা সহায়তা পাওয়ার কথা তারা পায় না। সরকার যেটা অর্জন বলছে সেটা দুর্নীতি বা লজ্জাজনক।

জাতীয় পার্টির এই নেতা আরও বলেন, সরকার বলছে ৩০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবে ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট দরকার হলেই লোডশেডিং করতে হয়। সারাদেশে লোডশেডিং চলছে। ১৫
হাজারের পরে বাড়তি ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন না হলেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বসিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ঐসব প্লান্টকে। জনগণের ক্ষতির কারণগুলোকে লাভজনকভাবে দেখানো হচ্ছে। অথচ এখনো সবাই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস আমদানিতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার কিন্তু উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়নি। এতে আমাদের বড় একটি অঙ্ক গচ্চা দিতে হচ্ছে। আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত হুমকির মুখে আছে।

এ সময় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মো. মুজিবুল হক চুন্নু, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, এ কে এম সেলিম ওসমান, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, মো. শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, মো. আশরাফুজ্জামান আশু ও নুরুন্নাহার বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD