শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রিয় নবীর প্রিয় রং

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

ধর্ম ডেস্ক : বিশুদ্ধ ও পূর্ণতার রং সাদা। সাদা রঙের অর্থ বিশুদ্ধতা, নির্দোষতা, পূর্ণতা এবং সম্পূর্ণতা। সাদা রং মনকে স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়।

রাসুল (সা.)-এর প্রিয় রং ছিল সাদা। তিনি সাদা রঙের পোশাক ব্যবহার করা পছন্দ করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরও যেন সাদা কাপড় দিয়ে কাফন দেয়। কেননা সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৫২)

তবে এর মানে এই নয় যে মুসলমানরা অন্য কোনো রঙের পোশাক ব্যবহার করতে পারবে না। রাসুল (সা.) অন্যান্য রঙের পোশাকও ব্যবহার করেছেন। তিনি সুতি, পশমি ও কাতানের তৈরি বিভিন্ন পোশাক ব্যবহার করেছেন। সবুজ, লাল, হলুদ, সাদা, কালো ও মিশ্রিত যখন যে রঙের পোশাক পেয়েছেন পরিধান করেছেন। কারণ আরবে কোনো পোশাক তৈরি হতো না। এগুলো মক্কা-মদিনার বাইরে সিরিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি দেশে তৈরি হতো। তাই ব্যবসায়ীরা যে পোশাক আনতেন তা-ই সাধ্যমতো ক্রয় করে বা উপহার হিসেবে যা পেতেন তা-ই ব্যবহার করতেন । আবু রিমছা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৫১)

তবে সাদা পোশাকের দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) একবার কালো রঙের উঁচু-নিচু (অমসৃণ) পাগড়ি পরিধান করেছেন। (এটা দেখে) মহানবী (সা.) তাঁকে কাছে ডাকেন। এরপর সেই পাগড়ি খুলে নিলেন এবং সাদা রঙের একটি পাগড়ি পরিয়ে দিলেন। পাগড়িটি তিনি প্রায় চার আঙুলের সমপরিমাণ মাথার পেছনের দিকে ছেড়ে দিলেন। অতঃপর মহানবী (সা.) বলেন, হে ইবনে আউফ! এভাবেই (সাদা রঙের) পাগড়ি পরিধান করবে। কেননা এটাই উত্তম ও সুন্দর। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৪/৫৮২)

এ কারণেই হয়তো সাহাবায়ে কেরামকেও বিভিন্ন সময় সাদা পোশাকে দেখা যেত। হজরত আলী (রা.)-এর পাগড়ি সম্পর্কে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সিফিফনের যুদ্ধে আমি আলী (রা.)-কে দেখেছি, তাঁর মাথায় সাদা পাগড়ি ছিল। (নেহায়া, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৭০)

শুধু তা-ই নয়, জিবরাইল (আ.)ও যখনই রাসুল (সা.)-এর কাছে মানুষের বেশে আসতেন, তাঁর পরনে থাকত ধবধবে সাদা পোশাক।

সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহুদের দিন আমি রাসুল (সা.)-এর ডানে ও বাঁয়ে দুজন পুরুষ লোককে দেখলাম। তাঁদের পরনে সাদা পোশাক ছিল। তাঁদের এর আগেও দেখিনি, আর পরেও দেখিনি। (বুখারি, হাদিস : ৫৮২৬)। হাদিসবিশারদদের মতে, তাঁরা ছিলেন জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.)।

এরপর দশম হিজরিতে বিদায় হজের কিছুকাল আগে জিবরাইল (আ.) সাহাবায়ে কেরামদের দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। ধবধবে সাদা পোশাকে এবং নিকষ কালো কেশবিশিষ্ট অবস্থায় ছদ্মবেশে মহানবী (সা.)-এর দরবারে এসে হাজির হন জিবরাইল (আ.)। তাঁর মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। মহানবী (সা.) তখন সাহাবায়ে কেরাম দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। ওমর (রা.) বলেন, আমাদের কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কোনো কোনো হাদিসবিশারদের মতে, প্রথমে মহানবী (সা.)ও চিনতে পারেননি। অবশেষে লোকটি মহানবী (সা.)-এর সামনে এসে এবং স্বীয় হাঁটুদ্বয় মহানবী (সা.)-এর পবিত্র হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বসে পড়েন। অতঃপর স্বীয় হস্তদ্বয় তাঁর পবিত্র ঊরুদ্বয়ের ওপর রাখেন। সাহাবায়ে কেরাম অবাক হয়ে তাঁর কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। লোকটি মহানবী (সা.)-কে চারটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তা হলো—ইসলাম, ঈমান, ইহসান ও কিয়ামতের সময়। (মুসলিম, হাদিস : ৮)

পবিত্র হজে লাখ লাখ হাজি মহান আল্লাহর দরবারে ডাকে সাড়া দিতে আসেন সাদা পোশাক পরেই। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিটি মুসলমানকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয় সাদা পোশাকেই।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD