আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহকে ‘বিষাক্ত আংটি’ ব্যবহার করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এমন অভিযোগ করেছেন সৌদির সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবরি।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাসিত ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৪ সালে তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে বলেছিলেন তিনি তার বাবার জন্য সিংহাসন খালি করতে চান। উত্তরাধিকার নিয়ে তখন শাসক পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ বলেন, আমি বাদশাহ আবদুল্লাহকে হত্যা করতে চাই। আমি রাশিয়া থেকে একটি বিষাক্ত আংটি পেয়েছি। শুধু তার সাথে করমর্দন করলেই হবে।
জাবরি বলেন, তিনি বড়াই করেও এটি বলতে পারেন। তবে তিনি এটি বলেছেন এবং আমরা এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, রাজদরবারে বৈঠকটি গোপনীয়তার সঙ্গে হয়েছে। কিন্তু গোপনে বৈঠকের ভিডিও করা হয় এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ২টি কপি কোথায় আছে তা তিনি জানেন।
সিবিএসকে দেওয়া এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে জাবরি সতর্ক করে বলে, সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক এবং বাদশাহ সালমানের ছেলে `মধ্যপ্রাচ্যে অসীম সম্পদের অধিকারী এক সাইকোপ্যাথ ও হত্যাকারী, যিনি তার জনগণ, আমেরিকা তথা গোটা পৃথিবীর জন্য হুমকি।
আবদুল্লাহ ২০১৫ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান। তার সৎ ভাই এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের পিতা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তার স্থলাভিষিক্ত হন। যিনি মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স উপাধী দেন।
ওয়াশিংটনের সৌদি দূতাবাস জাবরিকে একজন সম্মানিত সাবেক কর্মকর্তা বলে অভিহিত করেছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিবিসি।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিস্থাপন করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। পরে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও তার পদ হারান এবং গত বছর অনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক হওয়ার আগে তাকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর জাবরি কানাডায় পালিয়ে যান।
তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে মধ্যপ্রাচ্যের গোয়েন্দা পরিষেবার একজন বন্ধু তাকে সতর্ক করেন যে তাকে হত্যা করতে একটি দল পাঠাচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি এজেন্টরা তুরস্কে ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করার কয়েকদিন পর।
তিনি অভিযোগ করেন ছয়জনের একটি দল তাকে হত্যা করতে অটোয়ার একটি বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল। কিন্তু তাদের কাছে সন্দেহজনক সরঞ্জাম থাকায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠায়।
গত বছর জাবরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন। তবে যুবরাজ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান জামাল খাশোগিকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করেছেন, যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা মূল্যায়ন করেছে যে তিনি এই হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন।