মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

বাড়ছে সাপের উপদ্রব, ওঝা-কবিরাজেই সর্বনাশ

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

জেলা প্রতিনিধি : প্রতিদিনের মতো রাতে বাবা-মার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল শিশু ইজাহিদ। রাত ১১টার দিকে একটি বিষধর সাপ কামড় দেয় তাকে। শিশুটির চিৎকারে জেগে ওঠে পরিবারের সবাই। ঘুম থেকে উঠে তারা সাপ দেখতে পায়। ফলে বুঝতে বাকি থাকে না শিশু ইজাহিদকে সাপে কামড় দিয়েছে। রাতেই স্থানীয় ওঝার কাছে নেয়া হয়। ঝাঁড়ফুক চলে রাতভর। কিন্তু সকালে শিশুটি মারা যায়।

ঘটনাটি ঘটে ১২ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বাগুটিয়া গ্রামে। ইজাহিদ ওই গ্রামের মানোয়ার হোসেনের ছেলে। সে বাগুটিয়া সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।

এনিয়ে গত দুই মাসে জেলায় ১১ জন সাপের কামড়ে মারা গেছেন। এরমধ্যে জেলার শৈলকুপা উপজেলায় মারা গেছেন ৯ জন। ফলে জেলা জুড়ে বিশেষ করে শৈলকুপায় বসবাসকারীদের মধ্যে চরম সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সাপে কামড়ানোর পর পরিবারের সদস্যরা প্রথমে কবিরাজের কাছে নিয়ে ঝাঁড়ফুক করে সময় নষ্ট করেন। একেবারে শেষ পর্যায়ে তারা হাসপাতালে নিয়ে আসেন যখন আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। ফলে সচেতনতার অভাবে প্রায়ই জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।

এর আগে ২৯ আগস্ট রাতে জেলার শৈলকুপা উপজেলার দোহারো গ্রামে সাপের কামড়ে শরিফা খাতুন (২৩) নামে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গ্রহবধূ নিহত হন। তিনি ওই গ্রামের রাশিদুল ইসলামের স্ত্রী। ২৩ আগস্ট রাতে সাপের কামড়ে মারা যায় রাব্বি (৫) ও তাহসিন (৮) নামের দুই শিশু। ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় সাপের কামড়ে মারা যায় শৈলকুপার মনোহরপুর ইউনিয়নের উত্তর পাইকপাড়া গ্রামের আহম্মদ মন্ডল (৪) নামে এক শিশু। ৬ আগস্ট শৈলকুপায় ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের ছোবলে মারা যায় জেরিন নামের আড়াই বছরের এক শিশু। ৫ আগস্ট শৈলকুপার আসাননগর গ্রামে সাপের কামড়ে আব্দুর রশিদ (২২) নামে এক যুবক মারা যান। এছাড়া ১ আগস্ট রাতে জেলার কালীগঞ্জে সাপের কামড়ে জুলিয়া খাতুন নামের শিশুর মৃত্যু হয়।

একের পর এক সাপের কামড়ে মানুষ মারা গেলেও জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এর চিকিৎসায় কোনো এন্টিভেনম বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নেই। গেল বছর সব থেকে বেশি মারা যাওয়া উপজেলা শৈলকুপায় এক সেট এন্টিভেনম দেয়া হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় তা সদর হাসপাতালে এনে রাখা হয়েছে। আর হাতের কাছে চিকিৎসা সেবা না থাকায় স্থানীয়রা ওঝা-কবিরাজের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ফলে সাপে কাটা রোগীদের বেশিরভাগই মারা যায় বিনা চিকিৎসা অথবা অপচিকিৎসায়।

শৈলকুপার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী আব্দুর রহমান মিল্টন জানান, গত দুই তিন বছর হলো শৈলকুপায় সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। বর্ষা মৌসুম এলেই সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ বছর ইতোমধ্যে ৮ জন মারা গেছেন। গত বছর এ সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।

তার ভাষ্য, সাম্প্রতিক সময়ে এ উপজেলায় শাখাকানন বা কালাচ নামে পরিচিত সাপের উপদ্রব বেড়েছে। এ সাপে কামড়ানো ব্যক্তিদের বেঁচে যাওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাক্তার সেলিনা বেগম জানান, আমাদের দেশে সাপের কামড়ের শিকার ২০ ভাগ মানুষ বিষধর সাপের দংশনের শিকার হন। বাকি ৮০ শতাংশ মানুষকে সাধারণ সাপে কামড়ায়। এরমধ্যে অনেকে ভয়ে স্ট্রোক করে মারা যান। তবে সাপে কামড়ানোর পর ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আনলে সহজে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে এন্টিভেনম সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় সাপে কাটলে পরিবারের লোকজন গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক সময় পার করে ফেলে। তাছাড়া সাপে কাটার ভ্যাকসিনও সহজলভ্য না। আমাদের দেশে সাপের এন্টিভেনম উৎপাদন হয় না। বাইরের দেশ থেকে আনা হয়। সম্প্রতি কয়েক বছর হলো দেশীয় একটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এন্টিভেনম বাজারজাত করছে। কিন্তু মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় ওষুধ ব্যবসায়ীরা ফার্মেসিতে রাখে না।

লাইটনিউজ

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD