২০৪১ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বিশ্বব্যাপী নারীর সমতা, ক্ষতায়ন ও অগ্রগতি অর্জনে মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। এ অঙ্গীকারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান তিনি।
রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর সমতা, ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোর আহ্বান জানিয়েছেন। করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী নারীর চাকরির সুরক্ষার আহবান নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে যে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে এই ঘোষণার মাধ্যমে তা বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।
তিনি বলেন, সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ শিশুদের উন্নয়ন, সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন করে থাকে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। ৫ অক্টোবর সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপন করা হবে ও দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘শিশুর সাথে শিশুর তরে, বিশ্ব গড়ি নতুন করে।’
এছাড়া ৬ অক্টোবর ‘আমরা সবাই সোচ্চার, বিশ্ব হবে সমতার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উদযাপন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন উনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবর্ষে প্রকাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মভিত্তিক (২৫টি বই) শিশু গ্রন্থমালা, শিশুদের নির্বাচিত আঁকা ছবি নিয়ে ‘আমরা এঁকেছি ১০০ মুজিব’ ও শিশুদের নির্বাচিত লেখা নিয়ে ‘আমরা লিখেছি ১০০ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করবেন।
শিশু অধিকার সপ্তাহে শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু, পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও অধিকার বিষয়ে রয়েছে আলোচনা ও তাদের পরিবেশনায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সকল আলোচনা, পরিবেশনা ও প্রতিযোগিতা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন, প্লান ইন্টারন্যাশনাল, অপরাজেয় বাংলা ও শিশু অধিকার ফোরামসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।
শিশু দিবসের অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশে বেতার ও অনালইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া পোস্টার, ফেস্টুন-ব্যানার স্থাপন, ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সকল জেলা এবং উপজেলায় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন করা হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে মন্ত্রণালয় কি উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ ও প্রতিরোধের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের আইন রয়েছে, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেল, ক্রাইসিস সেন্টার, ট্রমা সেন্টার এবং একটি হট নম্বর রয়েছে। যে কেউ সেখান থেকে সহায়তা নিতে পারে। এছাড়া দেশের কোথাও কোন নারী বা শিশু নির্যাতন হলে সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে অপরাধীকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করা হয় এবং নির্যাতিতাকে চিকিৎসা সেবাসহ সব ধরনের সহায়তা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। সারা দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও কাজ করে যাচ্ছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি গত কয়েক দিনে আমরা তা দেখতে পেয়েছি। নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে ও মামলা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, যে কোন নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আমরা জেলা প্রশাসক, এসপি ও আমাদের যে জেলা -উপজেলা কর্মকর্তারা রয়েছে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছি। তারা নির্যাতিতার বাড়িতে চলে গেছে তাদের সাথে আলোচনা করছে। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি।
নির্যাতনকারীরা যাতে রেহাই না পায় সেজন্য সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহবান জানান মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম মহিলা, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদ ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
লাইটনিউজ