বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

বিস্তার ঠেকাতে নতুন অ্যাপ কীভাবে কাজ করবে?

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০

কোভিড-১৯ এর বিস্তার সামলাতে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস-কে এই মুহূর্তে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের উপদেষ্টা বিজ্ঞানীরা বলছেন একটি করোনাভাইরাস অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে যা বলে দেবে একজন মানুষ সম্প্রতি যাদের সংস্পর্শে এসেছে, তাদের মধ্যে কেউ সম্প্রতি করোনাভাইরাসে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে কিনা।

তারা বলছেন এই অ্যাপ লকডাউন পরিস্থিতি কোন মাত্রায় বজায় রাখা দরকার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে “গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা” রাখতে পারে।

মানুষের গতিবিধির ওপর এই অ্যাপ খুব দ্রুত নজরদারি করতে পারবে। কে কোথায় যাচ্ছে, কার সংস্পর্শে আসছে তা খুঁজে দেখার জন্য যে কাজ করতে এক সপ্তাহের গোয়েন্দাগিরি লাগত এই অ্যাপ সেই কাজ মুহূর্তে করতে পারবে।

তবে ব্রিটেনের কোন কোন গবেষক বলছেন কাউকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে বাধ্য করা যাবে না- অন্তত শুরুর দিকে তো নয়ই।

কীভাবে কাজ করবে এই অ্যাপ?


অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগ ডেটা ইন্সটিটিউট নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র এবং নাফিল্ড ডিপার্টমেন্ট অফ পপুলেশন হেলথ-এর একদল গবেষক এই অ্যাপটি উদ্ভাবন করেছেন।

তারা বলছেন একজন মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে কোথায় কোথায় যাচ্ছে তা তার জিপিএস লোকেশন তথ্য থেকে এই অ্যাপ বের করবে। যেখানে জিপিএস সিগনাল ভাল নয় সেখানে এই অ্যাপ ব্লু টুথ ব্যবহার করে এবং দ্রুত স্ক্যান (কুইক স্ক্যান বারকোড দেখে) কোড দেখে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের লোকেশন নির্ণয় করবে।

যদি কেউ অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে, সে এই অ্যাপের মাধ্যমে বাসায় তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করতে পারবে। পরীক্ষার ফল যদি পজিটিভ হয়, তাহলে সাম্প্রতিক কয়েকদিনে ওই ব্যক্তি যাদের কাছাকাছি সংস্পর্শে এসেছে তাদের প্রত্যেককে এই অ্যাপ সিগনাল পাঠিয়ে জানিয়ে দেবে।

অন্যদের ১৪ দিনের জন্য স্বেচ্ছা আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হবে। কিন্তু তাদের জানানো হবে না কোন ব্যক্তির কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে, যার কারণে এই সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি যে ব্যক্তির পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে তার কর্মস্থল এবং যেসব পরিবহন সে ব্যবহার করেছিল তাদের অফিস, রেলের কামরা, বা ব্যবহৃত বাস জীবাণুমুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হবে।

এই গবেষণাপত্রের অন্যতম একজন প্রধান লেখক অধ্যাপক ক্রিস্টোফ ফ্রেজার বলছেন বর্তমানে আমরা যেহেতু জানি না, যে আক্রান্ত, সে কোথায় কোথায় গিয়ে থাকতে পারে, কার সংস্পর্শে এসে থাকতে পারে, তার থেকে কার সংক্রমিত হবার আশংকা – ফলে খুবই অন্ধের মত চাপের মুখে পরিস্থিতি সামাল দেবার কাজ করতে হচ্ছে।

“কাজেই যদি এ বিষয়ে আর একটু বেশি তথ্য সংগ্রহ করা যায়, এবং অ্যাপের সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগিয়ে যদি কোন কোন ক্ষেত্রে লকডাউন শিথিল করার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তাহলে সেটা ব্যাপক ও প্রত্যক্ষভাবে লাভজনক হবে।”

“এবং আমি মনে করি অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে,” বলছেন অধ্যাপক ফ্রেজার।

প্রস্তাব করা হয়েছে করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট যেসব স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে সেটার মূল হাব হিসাবে যদি এই অ্যাপ ব্যবহার করা যায়, তাহলে এর মাধ্যমে খাবার এবং ওষুধ সরবরাহের জন্যও অনুরোধ নেয়া যাবে।

গবেষকরা বলছেন একইধরনের স্মার্টফোন সফটওয়্যার ইতোমধ্যে চীনেও ব্যবহার করা হচ্ছে। চীনেও এটা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে চীনে যাদের এই অ্যাপ আছে তারাই শুধু গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারবে অথবা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় যেতে পারবে।

অক্সফোর্ড গবেষণার সঙ্গে জড়িত একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল পার্কার বিবিসিকে বলেছেন চীনে যেভাবে এইধরনের অ্যাপ ব্যবহার হচ্ছে সেটা ব্রিটেনে অথবা অনেক জায়গায় প্রযোজ্য হবে না।

“তবে হয়ত এমন হতে পারে যে আমার পছন্দের রেস্তোঁরা আমাকে বলতে পারে এই অ্যাপ অনুযায়ী আমার থেকে ঝুঁকি যদি কম থাকে তবেই আমাকে সে রেস্তোঁরায় ঢুকতে দেয়া হবে। সেটা খুব খারাপ হবে না। বরং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য এই অ্যাপের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।”

তিনি আরও বলছেন যারা বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে কাজ করেন তাদের চাকুরিদাতাদের জন্য অথবা যেখানে প্র্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন, সেখানে ঢোকার জন্য এই অ্যাপের তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সবাইকে হয়তো গোড়ার দিকে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করা যাবে না। তবে অধিকাংশ মানুষ স্বত:প্রণোদিত হয়ে এই অ্যাপ ব্যবহার না করলে হয়তো প্রয়োজন বিবেচনায় বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নিতেও হতে পারে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এই নতুন সামাজিক যোগাযোগ খোঁজার অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
অধ্যাপক পার্কার বলছেন এই অ্যাপ কার্যকর করতে গেলে সবাইকে যে এটা ব্যবহার করতে হবে তা নয়, তবে জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এটা ব্যবহার না করলে এর কার্যকারিতা থাকবে না।

গবেষকরা আরও বলেছেন মহামারি ঠেকানোর জন্য এই অ্যাপ আরও কঠোরভাবে নজরাদরির জন্য আপডেট করা যাবে। যেমন দ্বিতীয়, ও প্রয়োজনে তৃতীয় স্তরে যোগাযোগ ঘটেছে এমন ব্যক্তিদেরও ঘরে থাকার জন্য সতর্কবার্তা দেয়া যাবে।

প্রফেসর ফ্রেজার বলেছেন বর্তমানে আমাদের গতিবিধি বা লোকেশনের ওপর নজর রাখার জন্য আমরা অনেক অ্যাপ ব্যবহার করি হয়তো নিজেদের বাড়তি কিছুটা সুবিধার জন্য, যেমন লাইভ ট্রাফিক ট্র্যাক করার জন্য। অর্থাৎ “যান চলাচলের সরাসরি তথ্য আমাদের যাতায়াতকে কিছুটা সহজ করবে এই আশায়।”

“এখানে এমন একটা অ্যাপ ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে যেখানে আপনার পরিচয় প্রকাশ না করে মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।”

এই অ্যাপ ব্যবহার করার বিষয়টি ব্রিটিশ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা রোরি কেথলান জোন্স জানাচ্ছেন।

সূত্র :বিবিসি
লাইট‌‍/এএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD