শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও জুনে চলে যায় কীভাবে, প্রশ্ন রিজভীর ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা সিঙ্গাপুর-যুক্তরাজ্য থেকে আসবে ২ কার্গো এলএনজি, ব্যয় ১৩৬৬ কোটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এশীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান ড. ইউনূসের ২০২৬ বিশ্বকাপে মেসির খেলা নিয়ে যা জানালেন আর্জেন্টাইন কোচ মহাসড়কে অটোরিকশা উঠলেই ব্যবস্থা, ছিনতাইয়ে জিরো টলারেন্স ঈদের ছুটিতে ঢাকাবাসী নিরাপদ থাকবেন: স্বরাষ্ট্র সচিব গাজায় হঠাৎ হামাসের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শফিক রেহমানকে যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন দেওয়া কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরে সহায়তা করবে চীনা এক্সিম ব্যাংক

বোরো ধান পাচ্ছে না খাদ্য বিভাগ, চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা!

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০

ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলার জন্য সরকারের খাদ্যবিভাগ চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। শুধু চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর থেকেই সরকারের এই লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন।

সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরুর দুই মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও জেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ৯৯৩ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। জেলার বড়াইগ্রাম, লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় লটারি করেও কৃষকদের থেকে ধান নিতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। এবার ধানের বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। সরকার শেষ পর্যন্ত ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে এর খেসারত দিতে হবে ভোক্তাসাধারণকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বোরো মৌসুমে জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে যেখানে বিগত মৌসুমগুলোর তুলনায় বিঘাপ্রতি এক মণ করে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকার শেষ পর্যন্ত ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে এর খেসারত দিতে হবে ভোক্তাদের।

এছাড়া, বিগত বছরগুলোতে বোরো কর্তনের সময় অতিবর্ষণ ও অকালবন্যায় জমি প্লাবিত হয়ে বিপুল পরিমাণে ধান নষ্ট হলেও এবার জমির সম্পূর্ণ ফসল ধরে তুলতে পেরেছে কৃষকরা। অপরদিকে, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হলেও খাদ্য বিভাগ নির্ধারিত ধান সংগ্রহ করতে পারছে না। বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছে না।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে নাটোর সদর উপজেলায় ৪৫৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে মাত্র ১০২.৯৬০ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ১৬০৯ মেট্রিক টনের মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৬২৪.৮০ মেট্রিক টন, সর্বোচ্চ বোরো ধান উৎপাদনকারী উপজেলা সিংড়ায় ৭২৪৭ মেট্রিক টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ২১২ মেট্রিক টন ও গুরুদাসপুরে ৯০৭ মেট্রিক টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৫৪ মেট্রিক টন। বাকী বড়াইগ্রাম, লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় এখন পর্যন্ত কৃষকের থেকে ধান পায়নি খাদ্য বিভাগ।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ, লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যুতি ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, তাদের স্ব-স্ব উপজেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেও কৃষকের সাড়া পাওয়া যায়নি। ধান বাজারে বিক্রিতে কৃষক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

যে কোন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়াতে পারেন ব্যবসায়ী
চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ার চৌগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক মোতাহার আলী বলেন, “আমরা কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে সম্পূর্ণ ধান পাইনি। এবার পুরো ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। বাজারে ধানের মণ দেড় হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি। তাই এবার ধান বিক্রি করে বিগত বছরের কিছুটা লোকসান তুলতে পেরেছি।”

বোরো সংগ্রহের সময়সীমা আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত খাদ্য বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভোক্তাদের ধারণা, ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষক উপকৃত হলেও যে মজুত সরকারের গড়ে তোলার কথা তা গড়ছেন বড় ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা। যে কোন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়াতে পারেন তারা।

কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বাগাতিপাড়া শাখার যুগ্ম সম্পাদক আল আফতাব খান বলেন, “সম্প্রতি বাজার চালের দাম বৃদ্দি পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার যদি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারে তবে সেই সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াতে পারে। করোনা পরিস্থিতেতে চালের দাম আরো বাড়লে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক বলেন, “কৃষক বাজারে ধান বিক্রি করে নায্যমূল্যের চেয়েও অতিরিক্ত মূল্য পাচ্ছে। আমরা এখনো ধান সংগ্রহে পিছিয়ে আছি। তবে আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো।”

জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন,”কৃষকের ধান বাজারে বিক্রির সুযোগে কোনো ব্যবসায়ী বা আড়ৎদার যেন ধান মজুদ করে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করতে পারে, সেদিকে নজর রাখা হয়েছে।”

এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, “নায্যমূল্য দিতেই সরকার সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান ক্রয় করে। এবার ধানের ফলন ও দাম দুটোই ভালো। আমরা ইতোমধ্যে বিভাগীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তারা চালের দাম না বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি কেউ ধানের মজুত করে চালের দাম বাড়াতে পারবে না।”

লাইট নিউজ

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD