মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শুরু, এরপর বনে যান শীর্ষ প্রতারক

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ‌্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ে শীর্ষ প্রতারকের বনে গেছে শাহীরুল ইসলাম শিকদার। এসব পরিচয় নিজেকে ‘ক্ষমতাধর ব্যক্তি’ হিসেবেও জাহির করতো বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব এসব কথা জানান।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাতে রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকার বাসা ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে শাহীরুল ইসলাম শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি সোলায়মান হোসেনসহ অনেকে ভুক্তভোগী প্রতারক শাহিরুলের বিরুদ্ধে র‌্যাবের কাছে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোপন তদন্তে ও স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, শাহিরুল নিজেকে কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ‌্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেড নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলে দাবি করতো। এই পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার নামে মিথ্যা প্রলোভনে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে।

চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা পুরনো হলেও মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেওয়া শাহীরুলের প্রতারণা কৌশল অনেকটাই ভিন্ন।

শাহীরুলের উত্থান

এইচএসসি পাস করে শাহীরুল নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গাড়ি ব্যবসা শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সৌখিন পরিবহনে কাজ করে বলেও জানা যায়। এরপর শুরু হয় নতুন ব্যবসা প্রতারণা। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহ। এরপর ধীরে ধীরে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লি. নামে শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রতারণা। ২০১৪ সালের দিকে রামপুরা এলাকায় ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ‌্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণামূলক কাজ দিয়ে নতুনভাবে কর্মজীবন শুরু করে। অতি অল্প সময়ে অধিক টাকার মালিক হওয়ার লোভে সে কোম্পানির নামে প্রতারণা করে অগণিত মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো। এরপর থেকে সে অবৈধ সম্পদের মালিক হতে শুরু করে।

একসময় প্রতারণার নানা অভিযোগ আড়াল করতে শাহীরুল তার অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লি. এর পরিবর্তে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি বেনামী মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে থাকে। ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সে নামীদামী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রদর্শন করে এবং বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে। তার প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী-পুরুষকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড, ড্রাইভার, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, বিক্রয় কর্মকর্তা, লাইনম্যান ইত্যাদি চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে বলে জানা যায়।

প্রতারণার কৌশল

প্রতারক শাহীরুল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়ার লক্ষে চাকরির চটকদার বিজ্ঞাপন দিতো। দেশের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আবেদন করলে তাদের কৌশলে ভুল বুঝিয়ে তার পরিচালিত কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি জনের কাছ থেকে ১৫-২৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করতো এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির ক্ষেত্রে ৫-১০ লাখ টাকা নিতো।

সে নিজেকে শুটিং ক্লাবের সদস্য বলেও পরিচয় দিতো। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ, ইউনিফর্ম ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবেও টাকা নেওয়া হতো। এভাবে অগণিত মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নামমাত্র কয়েকজন’কে নিয়োগ দিয়ে বাকি ভুক্তভোগীদের টাকা আত্মসাৎ করে শাহীরুল। দীর্ঘদিন তার অফিস/বাসায় ঘোরাঘুরির পরও চাকরিতে নিয়োগ না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখাতো।

উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক শাহীরুল নিজেকে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ভুয়া পরিচয় প্রদান ও চাঁদাবাজি করার অপরাধে তার নামে ডিএমপি’র রামপুরা থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD