গত জুনেই বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছিল, লকডাউন ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চলতি বছর বিশ্বের সাত থেকে ১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার হবেন। মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয় উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর কারণে গত তিন বছরের অগ্রগতি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
এবারের অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত কিছু দেশের জন্য আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ১৯৯০ সালে বিশ্বজুড়ে চরম দরিদ্র মানুষ ছিল ২০০ কোটির মতো, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ। গত বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছিল ৬৩ কোটিতে, যা মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ মাত্র। এসব চরম দরিদ্র লোকের বেশিরভাগই আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে এবারের মহামারিতে চরম দরিদ্র্য হতে যাওয়া অর্ধেকের বেশি মানুষই দক্ষিণ এশিয়ার।
জাতিসংঘের হিসাব আরও বেশি মন খারাপ করা। তাদের মতে, যাদের বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, পর্যাপ্ত খাবার নেই, সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর মতো পরিস্থিতি নেই, তারাই দরিদ্র। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এক যৌথ গবেষণা শেষে তারা জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে ৭০টি দেশের ৪৯ কোটি মানুষ দরিদ্র হচ্ছেন। এর কারণে বিশ্ব অন্তত এক দশক পিছিয়ে যাবে।
আগের যেকোনও মন্দার তুলনায় এবারের সংকটে অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে অনেক বেশি। এতে ভুক্তভোগীদের সামনে জীবিকা নির্বাহের জন্য খুব বেশি পথ থাকছে না। প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি হারিয়ে অনেকেই রিকশা চালাচ্ছেন, জুতা পালিশ করছেন, নাহয় ময়লা পরিষ্কার করছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেইে আঘাত হেনেছে করোনা।
বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, মহামারির কারণে বিদেশে কর্মরত অনেকেই আগের মতো অর্থ পাঠাতে পারছেন। ফলে চলতি বছর প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সম্ভবত জীবিকার জন্য শহরনির্ভর মানুষেরা। উপায় না পেয়ে অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন। সেখানে কাজ খুব বেশি না থাকলেও জীবনধারণের খরচ অন্তত কম। সরকারি হিসাবে, ভারতের অন্তত এক কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। লকডাউনের কারণে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা থেকে ৪০ শতাংশ বাইকচালক গ্রামে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে সেফবোডা নামে একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ।
সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় লকডাউন আবারও আসবে না বা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে পুরোনো গতি কবে ফিরবে সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা না থাকায় মানুষজনের শহরে ফেরার আগ্রহ এখনও কম। তার ওপর অনেক শহরেই নতুন করে বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে। সেখানে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেন না কেউই। সব মিলিয়ে ভয়াবহ এক অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছেন নতুন দরিদ্ররা।