মাদারীপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছে। এদের মধ্যে একজন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে মারা গেছেন। অন্যজন গ্রিস প্রবাসী তার নিজ বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে সোমবার সকালে মারা যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের পাকদী এলাকার মো. ইয়াহিয়া হাওলাদার (৬২) নামে এক ব্যক্তি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। রবিবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ ছাড়া শহরের থানতলী এলাকার গ্রিস প্রবাসী জুলফিকার ফকির (৬০) নামে এক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে সোমবার সকালে নিজ বাড়িতে মারা যান। প্রথম মার্চ মাসে করোনা শুরু হওয়ার আগে তিনি ছুটিতে মাদারীপুর আসেন। প্রবাসীর মৃত্যু খবর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং মাদারীপুর পৌরসভার মেডিক্যাল অফিসারকে সাংবাদিকরা অবহিত করলেও সমন্বয়হীনতার কারণে তার নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ ছাড়া লাশ দাফন করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে থানতলী এলাকার স্থানীয়রা জানান, একজন লোক করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন এসে পারলো না নমুনা সংগ্রহ করতে। সদর হাসপাতাল থেকে এখানে আসতে সময় লাগে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট। স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলার কারনে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ও আমরা এলাকাবাসী চরম আতংকে আছি।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন, উপসর্গ নিয়ে যারা মারা গেছে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ দাফন করা হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করার ব্যাপারে সিভিল সার্জনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব দেয়া আছে। সে হিসেবে নমুনা সংগ্রহ করার কথা। সকালে থানতলী এলাকায় যে মারা গেছে তার নমুনা নেয়া হয়েছে কি না, তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলতে পারবে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইকরাম হোসেন বলেন, সকালে থানতলী এলাকায় যে ব্যক্তি মারা গেছে এটা পৌরসভা এলাকার মধ্যে ছিল। এ ব্যাপারে পৌরসভা থেকে আমাদের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এ জন্য আমরা দেরিতে জানতে পেয়েছি। যখন তথ্য পেয়েছি তখন নমুনা সংগ্রহ করার সময় ছিল না।
মাদারীপুর পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ডা. হরষিৎ বিশ্বাস বলেন, পৌর এলাকার থানতলীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার কথা আমি আপনার (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে শুনলাম। আমরা তো নমুনা সংগ্রহ করতে পারি না। নমুনা সংগ্রহ করবে সদর উপজেলা বা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় একদিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে শাজাহান চৌধুরী (৫০) ও দুপুরে দমকল কর্মী সিদ্দিকুর রহমান মারা যান। তারা ৭/৮ দিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যাথায় ভুগছিলেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
মৃত শাজাহান চৌধুরী উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামের মৃত মোতাহার চৌধুরীর ছেলে ও সিদ্দিকুর রহমান পাথরঘাটা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। তিনি উপজেলার তুষখালী গ্রামের আ. রশীদের ছেলে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন থেকে তারা সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হন। সোমবার দুজনের শ্বাসকষ্ট গুরুতর হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অক্সিজেনের সংকটের কারণে কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্সযোগে খুলনা ও বরিশাল নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. ফেরদৌস ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঠবাড়িয়ায় এ যাবৎ ৩৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫ জন সুস্থ হয়েছেন। বাকি ৮ জনকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। শহরের থানাপাড়ার একটি মহল্লা রেডজোন বলবৎ রয়েছে।
লাইট নিউজ