বায়তুল হামদ অর্থ প্রশংসাভবন। এটি জান্নাতের একটি বিশেষ ঘর। এই ঘর আল্লাহ তাআলার নির্দেশে শুধুমাত্র তাদের জন্য নির্মাণ করা হয়, যারা সন্তান হারিয়ে সওয়াবের আশায়
ধৈর্যধারণ করেন। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ (জান কবজকারী) ফেরেশতাদের বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার
সন্তানের প্রাণ হরণ করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ?
তারা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ‘সেসময় আমার বান্দা কী বলেছে?’ তারা বলেন, ‘সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জিউন পাঠ
করেছে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করো, আর তার নাম রাখো ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসাভবন)।’ (তিরমিজি: ১০২১)
সন্তান মারা গেলে সাধারণত ধৈর্য ধরা খুবই কষ্টের, এরপরও যারা সওয়াবের আশায় নিজে সংবরণ করে ধৈর্য ধরেন, তাদের সন্তুষ্ট করার সকল ব্যবস্থা করবেন আল্লাহ তাআলা।
শৈশবেই মৃত্যুবরণ করা শিশুরা মা-বাবার জান্নাতে যাওয়ার কারণ হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (স.) বলতে শুনেছি, ‘শিশু (অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) মুসলিম সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে। তারা তাদের মাতা-পিতাকে পেলে কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।’ (মেশকাত: ১৭৫২)
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যেকোনো মুসলিম ব্যক্তির এমন তিনটি (সন্তান) মারা যাবে, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি,
আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমতে তাদের মা-বাবাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারি: ১৩৮১)
আলহামদুলিল্লাহ অর্থ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। পবিত্র কোরআনের শুরু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দিয়ে। মহানবী (স.) আলহামদুলিল্লাহ বলার অসংখ্য ফজিলত
বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য আলহামদুলিল্লাহর চেয়ে উত্তম বাক্য আর নেই। হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ বাক্য এবং সর্বোত্তম দোয়া হলো আলহামদুলিল্লাহ।’ (তিরমিজি: ৩৩৮৩)
বান্দার মুখের আলহামদুলিল্লাহ উচ্চারণ আল্লাহ তাআলা খুব পছন্দ করেন। হাদিসে আছে, আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি নিজের প্রশংসা পছন্দ করেন, এজন্য তিনি নিজের
প্রশংসা করেছেন এবং আমাদেরও তাঁর প্রশংসার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি: ২/১৮১৭) অন্য হাদিসে এসেছে, আলহামদুলিল্লাহ মিজানকে পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দুটি আসমান ও জমিনের খালি জায়গা পূর্ণ করে দেয়। (সহিহ মুসলিম: ২২৩)
সাধারণত খুশির সংবাদে বা সুখের সময় আলহামদুলিল্লাহ বলার রেওয়াজ রয়েছে আমাদের সমাজে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, দুঃখের সময় আলহামদুলিল্লাহ বলা যেনতেন
আমল নয়। এটি বড় মর্যাপূর্ণ একটি আমল। শুধুমাত্র আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারাই এই আমল করতে পারেন। এর ফজিলতও অবাক করার মতো। অসুস্থ ব্যক্তির আলহামদুলিল্লাহ
বলা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি আমার মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি, আর বান্দা সে অবস্থায় আমার প্রশংসা করে আলহামদুলিল্লাহ বলে; তবে সে বিছানা থেকে এমনভাবে ওঠে দাঁড়ায়; যেন তার মা তাকে ভূমিষ্টকালে যেমন জন্মদান করেছিল।’ (হাদিসে কুদসি)
সুতরাং সুখে-দুঃখে সবসময় আলহামদুলিল্লাহ বলা বা আল্লাহর শুকরিয়া করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘..যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল (সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে) এই দুই
সময়ে ১০০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল সে যেন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ১০০টি ঘোড়ার পিঠে মুজাহিদ প্রেরণ করলো, অথবা আল্লাহর রাস্তায় ১০০টি গাজওয়া বা অভিযানে শরিক হলো..।’ (তিরমিজি: ৫/৫১৩, নং ৩৪৭১; নাসায়ি, সুনানুল কুবরা: ৬/২০৫; সহিহুত তারগিব: ১/৩৪৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম। অর্থাৎ, পুরো
পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এত বড় নেয়ামত নয়, যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে। কারণ এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে।
(ইবনে মাজাহ) হাদিসে আরও এসেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় বাক্য চারটি— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর…(সহিহ মুসলিম: ২১৩৭; ইবনে মাজাহ: ৩৮১১; আবু দাউদ: ৪৯৫৮; মেশকাত: ২২৯৪)
শেষ কথা হলো- মুসলিম উম্মাহকে সবকিছুতে সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুখের সময় আলহামদুলিল্লাহ পড়লে যেমন সওয়াব, দুঃখের সময়
পড়লে আরও বেশি সওয়াব। তাছাড়া এটি সর্বোত্তম দোয়া হওয়ার কারণে এই শব্দটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুখে-দুঃখে আলহামদুলিল্লাহ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।