হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
আগে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিলো। এক রাতের ব্যবধানে তা বেড়ে প্রকার ভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে মৌখিকভাবে ভারতীয় কাস্টমসের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তারা কোনো অফিসিয়াল কাগজপত্র দেননি বলে জানিয়েছেন ভোমরার ব্যবসায়ী নেতারা।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক পঙ্কজ কুমার দত্ত বলেন, ‘সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ভারতীয় রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি করতে কাস্টমসকে নিষেধ করেছেন বলেও জানিয়েছে আমাদের। এদিকে আমাদের অনেক আমদানিকারকের বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা রয়েছে। এ ঘোষণার কারণে আমরা বিপাকে পড়েছি।’
পঙ্কজ কুমার দত্ত আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, আমাদের যেসব এলসি খোলা রয়েছে সেই পেঁয়াজগুলো অন্তত রপ্তানি করুক। আমাদের খোলা এলসির বিপরীতে বহু ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন যদি তারা পেঁয়াজ না দেয়, তাহলে আমাদের পেঁয়াজ পচে যাবে। এ নিয়ে মহা চিন্তায় আছি।’
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা আনিচুর রহমান জানান, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ছিলো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আজ সেই পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৯০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম তো আরও বেশি।
তালা উপজেলার জেঠুয়া বাজারে খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, গ্রামাঞ্চলের খুচরা বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। পেঁয়াজ সংকট শুরু হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে। তারা রপ্তানি বন্ধের অজুহাত দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে।
ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, সোমবার বিকাল থেকে ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সকাল থেকে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে আসেনি। ভারত সরকারের নির্দেশে পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ হলেও অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা জানাতে পারেননি ঘোজাডাঙ্গার ব্যবসায়ী বা কাস্টমস কর্মকর্তারা।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, ‘গত ১৩ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে পেঁয়াজ রপ্তানি করছেন। এতে তাদের নাকি লোকসান হয়েছে। একারণে তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে, পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে শিগগিরই তারা পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করবে।’
ভোমরা স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন জানান, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত এক সপ্তাহে (গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ৫৩৩ ট্রাকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেনি।
লাইটনিউজ