করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস বন্ধ থাকার পর উন্মুক্ত সৈকতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে পর্যটকেরা। দেশী-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমুদ্র পাড়ে আসছে তারা। সমুদ্রস্নান আর হেসেখেলে পার করছে সময়। যেন ভরা মৌসুমে আবার ফিরেছে পর্যটকরা। আর দীর্ঘদিনের লোকসান পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছে হোটেল মালিকেরা।
স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে গত ১৭ আগস্ট সমুদ্র সৈকত উন্মুক্ত করে দিয়েছ জেলা প্রশাসন। প্রথম দিকে পর্যটক সমাগম আশানুরূপ ছিল না।
তবে, শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালের দৃশ্য ছিল ভিন্ন। এদিন লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত পর্যটকে টইটুম্বুর দেখা যায়।
ঢাকার শ্যামলী থেকে আসা পর্যটক দম্পতি রেশমা-জাহেদ। লাবণী পয়েন্টে আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছিলেন। যেন ফিরে পেলেন নতুন যৌবন। একটু এগিয়ে গিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। অভিব্যক্তি জানালেন রেশমা-জাহেদ। তাদের ভাষ্য, করোনার কারণে অনেক দিন ঘরে বন্দি ছিলেন। চাকরিতেও যান নি। শ্বশুর বাড়ি যাওয়াও ছিল একপ্রকার নিষিদ্ধ। দীর্ঘদিন পর সাগর পাড়ে আসতে পেরে তারা যেন ‘কারামুক্ত জীবন’ পেল।
বোন ভাগ্নেসহ পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে সাগর পাড়ে বেড়াতে যান ডা. রিপন চৌধুরী। সাগরপাড়ে অনেকক্ষণ সময় কাটান। মেতে ওঠে হৈ-হুল্লোড়ে। ছোট্ট মনিদের ঘোড়ায় চড়িয়ে আনন্দ নিচ্ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার তরুণ এই চিকিৎসক।
হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জানান, করোনাকালে বন্ধ থাকায় সাড়ে চারশতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সব দিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে সমুদ্র সৈকত উন্মুক্ত করে দেয়ায় নতুনভাবে ভাবছে তারা।
তবে, প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করছে বলে জানালেন আবুল কাসেম সিকদার।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানিয়েছেন, স্টার মানে হোটেলগুলোতে পর্যটক বুকিং হচ্ছে। মাঝারি শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভালো না। অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এখনো যোগ দিতে পারেনি। অধিকাংশের বেতনভাতা বাকি।
তিনি জানান, করোনাকালের ক্ষতি পুষাতে আরো অন্তত ২টি মৌসুম লাগবে। রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে অনেক পর্যটক চলে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজারে টুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সমুদ্রে নামার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি বিচ কর্মীরাও আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। কোথাও পর্যটন হয়রানির অভিযোগ পেলে সাথে সাথে জানানোর অনুরোধ করেন টুরিস্ট পুলিশের এসপি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, ১৩টি শর্তে কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সাগরপাড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা তা তদারক করা হচ্ছে। এ জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হয়েছে। পর্যটকদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হচ্ছে। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে জরিমানা গুনতে হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।