শুরুটা হয়েছিল সৌদি আরব সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা দিয়ে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সৌদি আরবে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ কয়েকমাস ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার পর পুনরায় সেদেশের আকাশপথ খুলে দেওয়া হয়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেদেশের আকাশপথ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব সরকার। এরপর সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা অনুমতি দিলেও উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমোদন দিচ্ছিল না।
কিন্তু ঝামেলা যাওয়ার হওয়ার তা হয়ে যায় গত কয়েক মাসের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মার্চ থেকে আগস্ট সময়কালে সৌদি আরব থেকে ২০, ৮২৯ দেশে এসেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে এসে আটকা পড়েছেন আরো ২০ হাজার যাত্রী। প্রায় ৪০ হাজার সৌদি প্রবাসী এখন দেশে। এদের সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সৌদি আরব ফিরে যেতে না পারলে অধিকাংশের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে। তখন আর এরা সেদেশে ফিরে যেতে পারবেন না।
এই আশঙ্কায় ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে প্রবাসীরা। প্রথম দিন বিক্ষোভের পর সরকারের মধ্যস্থতায় বিমান আগামী ১ অক্টোবর থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। আর আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের ভিসার মেয়াদ আরো ২৪ দিন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিমানকে জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে সৌদি আরব। অন্যদিকে সৌদিয়া সপ্তাহে ঢাকা থেকে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিমান চলাচল খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত স্বল্প সংখ্যক ফ্লাইট দিয়ে আগামী ২৪ দিনের মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে সৌদি আরব পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না।
তাই ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লাইট সংখ্যা না বাড়ালে এত প্রবাসী সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে এরা চাকরি হারিয়ে আর্থিকভাবে চরম সংকটের মধ্যে পড়বেন।
বিমানের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এই মাসেই বিমান সৌদি আরবে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের আনতে কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছিল সেদেশের সিভিল এভিয়েশন থেকে। ওই সময় ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলে কিছু সংখ্যক প্রবাসী সময়মতো সৌদি আরব যেতে পারতেন।
এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে বিমান সৌদি আরবে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের আনতে ৫টি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পায়। ফিরতে আগ্রহীদের নিতে চাইলেও সেই অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমরা একটি বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সৌদি আরব সরকার তার স্বার্থ বিবেচনা না করে কাউকে সেদেশে ঢুকতে দেবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে তিনি মনে করেন, প্রথম দিকে ফ্লাইট সংখ্যা কম থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেদেশের সরকার ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
লাইটনিউজ