শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

হাজার টাকায় সারারাত যৌনকর্মে রাজি না হওয়ায় হত্যা

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১

ঘটনাটি রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায়। সম্প্রতি সেই এলাকার সড়কের ফুটপাথে কার্টন ভর্তি এক নারীর বীভৎস মরদেহ পাওয়ার পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এক পর্যায়ের কেবল ঘটনার রহস্য উদঘাটন নয়, এমন নির্মম ঘটনা যে ঘটিয়েছে তাকেও গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

যে নারী খুন হয়েছেন তিনি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ইচ্ছে হলে মাঝে মাঝে পরিচিতদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে একান্তে লিপ্ত হতেন। এমন কর্মই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। নিভিয়ে দেয় তার প্রাণ প্রদীপ।

ঘটনাটি যে যুবক ঘটায় তার নাম আব্দুল জব্বার (২৫)। পেশায় গাড়ির গ্যারেজের কর্মী। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করার পরেই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

ডিবি বলছে, ওই নারী গার্মেন্টসে চাকরি করলেও তিনি অনিয়মিত যৌনকর্মী। তবে যে কারও সাথে সময় কাটান না তিনি, কেবল পূর্ব পরিচিত হলেই টাকার বিনিময়ে একান্তে লিপ্ত হন। গ্রেপ্তার করা আব্দুল জব্বার তার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে ঘটনার দিন বিকেলে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং ফুটপাতের ফুচকার দোকানে ঘোরাঘুরি করে। পরে সন্ধ্যায় আব্দুল জব্বারের সঙ্গে তার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ীর ভাড়া বাসায় যায়। এদিকে ওই নারীকে বাসায় আনার পরিকল্পনায় আগেই নিজের স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো আব্দুল জব্বার।

ওই নারীকে এক হাজার টাকা চুক্তিতে সারারাতের জন্য বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সেই মোতাবেক সন্ধ্যায় বাসায় গিয়েই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় তারা। এক পর্যায়ে ওই নারী চুক্তির টাকা চান, যা দেওয়া হলে তিনি নিজ বাসায় চলে যাবেন বলে জানান। এদিকে ওই যুবক দাবি করেন তার সঙ্গে সারারাত অবশ্যই সময় দিতে হবে। সেই চাহিদা অনুযায়ী ওই নারী অস্বীকৃতি জানানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা টিপে হত্যা করে যুবক। কেবল তা’ই নয়, হত্যার পর ওই নারীর মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল। এর পর তার মরদেহ কার্টনভর্তি করে সড়কের ফুটপাতে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। গা শিউরে উঠার মতো এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটেছিলো গত ০৮ অক্টোবর দিনগত রাতে।

হত্যার পরে ১০ অক্টোবর মরদেহ উদ্ধারের পর তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপরই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেলে ভাটারা থানার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ি এলাকায় নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। এই ঘটনার পর ডিবি পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা শুরু করে। পরবর্তীতে অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপরই গত ১৯ অক্টোবর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার জব্বারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পেরেছে, গত ০৮ অক্টোবর দুপুরে মোবাইলে কথা বলে জব্বারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সে বের হয়। তাকে নিয়ে ফুটপাতের ফুচকার দোকানে ঘোরাঘুরি করে জব্বার। সন্ধ্যার পরে সে তাকে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। এর আগেই নিজের স্ত্রী-সন্তানকে কৌশলে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ওই নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম শেষ করলে তিনি টাকা দাবি করেন এবং চলে যেতে চান। কিন্তু জব্বার ভিক্টিমকে সারা রাতের জন্য রাখতে চায়। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হন ওই নারী। হুমকি দেন তার (জব্বারের) সব কর্মকাণ্ড ফাঁস করে দেবেন এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে। জব্বারের দাবি, সে নিজের আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে ওই নারীকে (শিপন আক্তার) ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে গলাটিপে হত্যা করে।

ডিবি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, জব্বার ইয়াবা আসক্ত ছিল। খুনের পর ভিক্টিমের মোবাইল ১ হাজার টাকায় বিক্রি করে সে ৩ পিস ইয়াবা কিনে। এসময় তার বন্ধু হীরাকে বাসায় আনে। তারা দুজন একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করে এবং মরদেহ গুমের পরিকল্পনা করে। এসময় মরদেহটি প্রথমে একটি কার্টনের মধ্যে রেখে পরবর্তীতে ভাঙারির দোকান থেকে আনা বড় বস্তায় ভরে। পরে রাত তিনটার দিকে জব্বার ও হীরা মরদেহ মাথায় নিয়ে তিনতলা থেকে নামায়। পরবর্তীতে ১০০ টাকায় রিকশা ভাড়া করে মরদেহটি রাস্তায় ফেলে দেয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিতে ওই নারীর চুরি হওয়া মোবাইল, তার ফেলে দেওয়া বোরকা এবং স্যান্ডেলসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল জব্বার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD