তিন মাস পর রোববার (২১ জুন) ফজরের সময় মোয়াজ্জিন আজানে ডাকছেন, হাইয়্যা আলাস সালাহ! হাইয়্যা আলাল ফালাহ! আহ্, কত পরিচিত আহ্বান, কিন্তু কতদিন শুনি না।’ মক্কায় বসবাসকারী বাংলাদেশী আলেম সালাহউদ্দিন আহমাদ এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন মক্কা অঞ্চলের মসজিদগুলো খুলে দেওয়ার পর নামাজে অংশ নেওয়া শেষে।
ফজরের জামাত শেষে পাঠানো ম্যাসেঞ্জারের বার্তায় তার উচ্ছ্বাস বুঝা গেল স্পষ্ট। তবে তার আবেগময় কণ্ঠ ও হৃদয়ের প্রশান্তিতে কিছুটা কমতি রয়েছে, কারণ এখনও মসজিদে হারাম খুলে দেওয়া হয়নি সবার জন্য।
রোববার (২১ জুন) ফজরের নামাজে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে খুলে দেওয়া হলো পবিত্র মক্কা নগরীর সব মসজিদ। তবে মসজিদে হারাম খুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সেখানে এখনও জামাত চলছে সীমিত পরিসরে।
৩১ মে মসজিদে নববীসহ সৌদি আরবের অন্য মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হলেও বন্ধ ছিল মক্কা অঞ্চলের এসব মসজিদ। ধারণা করা হচ্ছে, মসজিদে হারামে সাধারণ মানুষ নামাজের অনুমতি পেতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায়ের শর্তে মক্কার ১ হাজার ৫৬০টি মসজিদ ফজরের সময় থেকে খুলে দেওয়া হয়। মুসল্লিরা যথাযথ নিয়ম মেনেই নামাজে অংশ নিয়েছেন।
করোনা মহামারিজনিত কারণে ১৭ মার্চ থেকে এসব মসজিদে জামাত ও জুমা বন্ধ ছিল।
শুক্রবার মসজিদ খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব মসজিদ জীবাণুমুক্তকরণসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করেছে। মসজিদের ভেতরে মুসল্লিরা কীভাবে দাঁড়াবে তার নির্দেশনা দিয়েছে। আপাতত মসজিদে অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের নিজস্ব জায়নামাজ নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। নামাজের প্রতি কাতারের মাঝে এবং প্রত্যেক মুসল্লির মাঝখানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
মসজিদ জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত
এদিকে সৌদি প্রেস এজেন্সী (এসপিএ) শনিবারই জানিয়েছে, সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার (২১ জুন) সকাল ৬টা থেকে মক্কা মোকাররমা ও বন্দর নগরী জেদ্দাসহ সারাদেশে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পূর্বঘোষিত নির্দেশ মোতাবেক মক্কা ২৪ ঘণ্টা কারফিউয়ের আওতায় ছিল এবং জেদ্দায় সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কারফিউর আওতামুক্ত ছিল।
মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে সৌদি আরব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, প্রতিরোধ এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিসহ সমস্ত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুণরায় শুরু করার অনুমতি দেবে। তবে উমরা, ভিজিট ভিসা এবং আন্তর্জাতিক বিমানের পাশাপাশি স্থল ও সমুদ্রসীমা পেরিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া অবধি স্থগিত থাকবে। মন্ত্রণালয় জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান এবং নাক এবং মুখ ঢেকে রেখে চলতে আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো সমাবেশ সর্বোচ্চ ৫০ জনের বেশি মনুষের উপস্থিতিতে হতে পারবে না। সব বাসিন্দা ও নাগরিকের দায়িত্বশীল আচরণ করা এবং কর্তৃপক্ষের দেওয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনা, দিক-নির্দেশনা এবং সর্বশেষ অগ্রগতি পাওয়ার জন্য এ কর্মকর্তা সবাইকে ‘তাওয়াক্কালনা’ এবং ‘তাবাউদ’ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করারও আহ্বান জানান।
পৌর ও পল্লীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, পুরুষদের সেলুন এবং নারীদের বিউটি পার্লারও রোববার থেকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসে দেশটিতে শনিবার নতুন করে তিন হাজার ৯৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার ২৩৩ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ২৩০ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৯৮ হাজার ৯১৭ জন।
লাইটনিউজ/এসআই