বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন

অর্জন-বিসর্জনের উৎসব ঈদুল আজহা

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১০ জুলাই, ২০২২

মুসলিম বিশ্বের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আজ (১০ জুলাই)। বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় উৎসবের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে। সামর্থ্যবান মুসলমানরা ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু কোরবানি করবেন। ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির কোরবানি-উৎসর্গ-বিসর্জনের দিন। অথচ এ দিনই আবার প্রকৃত ঈদের আনন্দ-উৎসবের দিন। ত্যাগেই সুখ, ভোগে নয়। বিসর্জনেই প্রতিষ্ঠা, উৎসর্গেই সাফল্য, নিবেদনেই আনন্দ।

গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস রোধে ধর্ম মন্ত্রণালয় এবারও ৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এ ছাড়া এবার কোরবানির ঈদ এমন এক সময় এলো, যখন দেশের একটি অংশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বন্যাদুর্গত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাই সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রার্থনায় থাকবে সবার সুখ-শান্তি কামনা।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কুরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সাথে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কুরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে। আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।’

এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে কোনও ধরনের আলোকসজ্জা না করার নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরিধান, নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে ঈদগাহে প্রবেশ এবং মসজিদ বা ঈদগাহের অজুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ঈদের দিন রাত ১০টার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ ছাড়া সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয়টি সকাল ৮টায়, তৃতীয়টি সকাল ৯টায়, চতুর্থটি সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হবে বেলা পৌনে ১১টায়।

সকাল ৭টার প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মোকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান। এরপর সকাল ৮টার দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী। মোকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী সকাল ৯টার তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন। মোকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।

সকাল ১০টার চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মোকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জহিরুল ইসলাম।

বেলা পৌনে ১১টার সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতী মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। মোকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।

পাঁচটি জামাতের কোনওটিতে কোনও একজন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল-আজহার নামাজের জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। চিফ হুইপ, হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ-সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেবেন। এ ছাড়া এই জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত বলে সংসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। জামাতে সকল আগ্রহী মুসল্লিকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় পবিত্র ঈদুল আজহার দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম হাফেজ মাওলানা নাজীর মাহমুদ।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদুল আজহার নামাজের জামাত সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক শফিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে খেলার মাঠের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত তিনটি মসজিদে ঈদ জামাতের আয়োজন অন্যত্র করা হবে। সেগুলো হলো- কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল পৌনে ৭টায়, বকশীবাজার বায়তুল সালাম মসজিদে সকাল ৭টায় ও আজাদ আবাসিক এলাকা মসজিদে সকাল সোয়া ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক ঈদুল আজহার জামাতে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কুরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুতবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD