বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন

রেমিট্যান্স বাড়াতে বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

লাইটনিউজ রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর শেষে রেমিট্যান্স আয় কমেছে। একই সঙ্গে হোচট খেয়েছে রপ্তানি আয়েও। এর প্রভাবে কমে যাবে রিজার্ভ। তাই রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার পাশাপাশি বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া, এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৪৯.৮৩ কোটি মার্কিন ডলার। গত আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। এদিকে, রপ্তানিও কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া মানে ডলার সরবরাহ আরও কমে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থাকায় রিজার্ভও কমে যাচ্ছে। তবে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি টানা ১৩ মাস ইতিবাচক থাকার পর কমেছে। এই সংকট থেকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বেরিয়ে আসতে হলে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে হবে এবং দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠাতে হবে। আর তাতে ডলার সরবরাহ বাড়বে। মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া, রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে বিকল্প পথ বা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাতে সংকট নিরসন হবে বলে আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার ফলে নানা সমস্যায় পড়তে হবে। এর মধ্যে একদিকে যেমন রিজার্ভে চাপ পড়বে অপরদিকে টাকার মান কমবে। এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রডাক্ট ডাইভারসিফাই করে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। বিপরীত দিকে প্রকৃত পক্ষে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে সাধারণত দুটি প্রক্রিয়ায় অর্থপাচার হয়। আর অর্থপাচার রোধে আন্ডার ইনভয়েসিং (রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো) ও ওভার ইনভয়েসিং (আমদানির মূল্য বেশি দেখানো) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থপাচার যাতে না হয় এবং হুন্ডির মাধ্যমে যাতে রেমিট্যান্স না আসে সেগুলো মনিটরিং করতে হবে। তাতে রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা আছে।

তিনি আরও বলেন, এসব কাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কাজগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে করতে হবে। তাহলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, করোনা মহামাহারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নানা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনেক প্রবাসীর কাজ নেই। যাদের কাজ আছে তাদের আয় কমে গেছে। এ কারণে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এ থেকে উত্তরণে আমাদের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠাতে হবে। প্রত্যেক দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে জনবল পাঠানোর জন্য সরকারি পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করতে হবে। সরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি কাজে লাগাতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কয়েক লাখ লোক বিদেশে গেছে। অথচ সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে। এটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। কারণ রেমিট্যান্স কমার কারণে রিজার্ভে চাপ পড়বে, অন্যদিকে টাকার মান কমবে। তবে এক মাসের হিসাব দিয়ে রেমিট্যান্সের গতিধারা বোঝা যায় না। প্রকৃতপক্ষে এর গতি ধারা বুঝতে হলে একটি প্রান্তিক দেখতে হবে।

তিনি বলেন, বৈধ পথে যে অর্থ আসে তার হিসাব রেমিট্যান্সে আসছে। কিন্তু এর বাইরে নানাভাবে দেশে অর্থ আসছে সেগুলোর হিসাব তো প্রতিবেদনে উঠে না। তবে অবৈধভাবে দেশে অর্থ আসা বন্ধ করতে পারলে প্রকৃত রেমিট্যান্সের চিত্র উঠে আসবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অর্থনীতি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। তাই প্রকৃতপক্ষে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে।

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Lightnewsbd

Developer Design Host BD