করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকার চতুর্থ দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে দেশে। এর সঙ্গে অতি জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ অঘোষিত লকডাউন চলছে। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অবস্থা এখন সংকটময়। সীমাহীন কষ্টে আছেন। ক্ষুধার জ্বালায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। ত্রাণও পাচ্ছেন না সবাই। বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে রাস্তায় নামছেন তারা।
রাজধানীর ফার্মগেটের সিএনজি অটোরিকশা চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা বেঁচে গেছেন! আর আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, অনেক কষ্টে আছি। না পারি মরতে, না পারি বাঁচতে। ক্ষুধার জ্বালায় প্রতিদিন রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যা খেপ মারছি, তা বলার মতো কিছু হয়নি। সকাল থেকে খালি গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছি, রাস্তায় তেমন যাত্রী নেই। করোনার কালে মালিককে তেমন জমা দেওয়া লাগে না আমার। মালিককে নামে মাত্র জমা দিই। এই সময় বেঁচে থেকে অনেক বিপদে আছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। মরে যেতে পারলে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেত।
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের ফল বিক্রেতা মো. রাজ্জাক। আগে হোটেল বয় ছিলেন। তিনি বলেন, হোটেল বন্ধ থাকায় ভ্যানগাড়িতে করে ফল বিক্রি করতে শুরু করেছি। জমানো যা টাকা ছিল, এর কিছু টাকা দিয়ে ফলের ব্যবসা করতে নেমেছি। আর কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছি না। খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে তো হবে। আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য। মা-বাবা, ভাই-বোন সবাইকে নিয়েই বেঁচে থাকার চেষ্টা। পরিবারের সদস্যদের খাবারের যোগান দিতে রাস্তায় ফল বিক্রি করতে নামা। কষ্টের কথা না পারি কাউকে বলতে, না পারি সইতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর-১২ নম্বরের এক চাকরিজীবী বলেন, গত দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। তবুও এরই মাঝে কাজে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কাজ তো আর থেমে নেই। গত মাসে দেনা করে চলেছি। আর চলতে পারছি না। পরিবার সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কাউকে বলতেও পারি না কষ্টের কথা। এখন তো দেনাও নিতে পারছি না কারও কাছ থেকে। আগের পাওনাদাররাও তাগাদা দিচ্ছেন টাকার জন্য। সবারই একই রকম অবস্থা। হাতে টাকা-পয়সা নেই। আগামী দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, তা এখন বড় চিন্তার বিষয়।
লাইটনিউজ/এসআই