করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। আর এর বাইরে নেই বাংলাদেশও। তবে অর্থনৈতিক সমস্যা সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। দিন মজুর, ছোট চাকুরে, পরিবহন শ্রমিক বা পোশাকশিল্পে শ্রম দেওয়া মানুষদের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যেই আবার শোনা যাচ্ছে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ অভিযোগ। করোনা ঝুঁকির মধ্যে একাধিক স্থানে বকেয়া বেতনের দাবিতে মানববন্ধন করতেও দেখা গেছে শ্রমিকদের। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামলনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাসুদ মোড়ে। সেখানে ক’দিন আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন শ’দুয়ের শ্রমিক। এই আন্দোলনটা নিমিষেই সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। তবে ওই শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে!
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক সাতক্ষীরায় গড়ে তুলেছেন বিশাল আকারের সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড। উন্নত জাতের কাকড়া উৎপাদন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তিন মাস বেতন না হওয়ায় আন্দোলনে নামেন ফার্মের কর্মীরা। এমন আন্দোলনে রীতিমতো বিস্মিত সাকিব। দেশসেরা ক্রিকেটার জানতেনই না যে, এমন কিছু হতে যাচ্ছে।
ব্যস্ততার কারণে সেভাবে ফার্মের সার্বিক বিষয় খোঁজখবর রাখা হয় না তার। তাছাড়া যেভাবে প্রচার হয়েছে সাকিব বললেন, আসল ঘটনা তেমনটা নয়। বিব্রতকর বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক পোস্ট লিখেছেন সাকিব। জানিয়েছেন, নিজের তহবিল থেকেই শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন তিনি।
পাঠকদের জন্য সাকিবের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
বিগত কয়েক দিনে অ্যাগ্রো ফার্মে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমার বিলম্বিত বক্তব্যের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সব তথ্য ঠিকমত যাচাই-বাছাই করে সত্যটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি বলেই এই বিলম্ব। যদিও অ্যাগ্রো ফার্মের সাথে আমার নাম সরাসরি যুক্ত। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে আমার অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মতো এই কোম্পানিটিও অন্যান্য মালিক/অংশীদারদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ সময়েই আমার জন্য ব্যবসার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড তদারকি বা সরাসরি অফিস পরিদর্শন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনারা সবাই জানেন, এ বছরের শুরু থেকে আমি আমেরিকায় অবস্থান করছি আমার পরিবারের সাথে। পরিবারের নতুন অতিথি অগমনের অপেক্ষায়। এই সময়ের মধ্যে অ্যাগ্রো ফার্মের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা আমার জানা ছিল না এবং শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারটি আমি মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারি। অন্যান্য মালিকেরা এক্ষেত্রে আমাকে বিগত কয়েক মাসের সকল তথ্য যথাযথভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে অবহিত করেছে, কিছু সংখ্যক কর্মচারী যারা কর্মরত ছিল তাদের বেতন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য যে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষেই প্রায় সব কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কর্মচারীরা হঠাৎ রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় ধারণা করা যায়, কারও গোপন এবং কু-প্ররোচনাতেই এমনটি হয়েছে।
তবে যখনই আমি বুঝতে পারি যে, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তখনই আমি কোম্পানি এবং বাকি অংশীদারদের সাহায্য ছাড়াই আমার নিজের তহবিল থেকে তাৎক্ষণিক বকেয়া বেতন পরিশোধ করি। আমি বিশ্বাস করি এটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং এটা নিজেদের মধ্যেই রাখা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি এটা দেখে যে, কর্মচারীরা মাসের শেষে বেতন নিতে সম্মতি জানিয়েও তারা আন্দোলনে অংশ নিলো!
অনেকের মত আমিও এই মহামারী মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহ করে আমার কর্মচারীদের মতই অন্যান্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি এটা বুঝে উঠতে পারছি না মানুষ কেন ভাবছে, আমি আমার কর্মচারীদের বঞ্চিত করব, যাদের আমি গত ৩ বছর ধরে বেতন দিয়ে আসছি।
আমি সত্যিই মর্মাহত যে, মিডিয়া ব্যাপারটির সত্যতা যাচাই না করেই আংশিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে। আংশিক মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক সংবেদনশীল শিরোনামগুলোর চেয়ে তাদের সত্যতা যাচাই করে নেওয়াই উচিত ছিলো।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সত্য অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য মানুষকে জানানো মিডিয়ার বড় দায়িত্ব। তা না হলে অযথাই আমার মতো অনেক মানুষই এ ধরনের খবরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা শুধুমাত্র আমাকে দোষারোপ না করে পুরো ব্যাপারটি সকল অংশীদারের নামসহ সবার সামনে তুলে ধরতে পারতো। শুধু আমি না, কেউই এধরনের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাশা করে না। আশা করি মিডিয়া এবং সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সংবাদ সকলের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হবেন।
আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, বর্তমান সংকটকে সামনে রেখে আমাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা প্রয়োজন। এবং যেকোনো ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য, গুজব এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সজাগ ও সোচ্চার হওয়া দরকার। আমি মনে করি এখন অন্যান্য যেসব অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে সেদিকেই আমাদের মনোযোগটা বেশি দেওয়া উচিত।
সবাই দয়া করে বাসায় থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।