খুলনা প্রতিনিধি : খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে ৯টিতেই করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও নড়াইলে আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধ্বমুখি। জেলাগুলোতে করোনা পজিটিভ দুই অংকে চলে গেছে। খুলনার অবস্থাও ভালো না। বিভাগে এখন মোট আক্রান্ত একশ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে ২ জন।
তবে খুলনা বিভাগে একমাত্র ব্যতিক্রম সাতক্ষীরা জেলা। এখানে এখন পর্যন্ত একজনও করোনা পজেটিভ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই তৃণমূলের জন্য দেয়া প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টিনকে গুরুত্ব দিয়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা, সাধারণ জনগণের সহায়তায় বিদেশ এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরা লোকদের তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা এবং কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, সর্বোপরী স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনের তৎপরতা এবং জনসাধারণে সহযোগিতার সুফল পাচ্ছে সাতক্ষীরা।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. হোসেন সাফায়াত জানান, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই সাতক্ষীরার সর্বস্তরের নেতৃস্থানীয়দের পরামর্শে আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যশিক্ষা দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন করা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া। এরপর মাঠকর্মীদের মাধ্যমে সর্বত্র নজরদারি জোরদার করা হয়। প্রশাসনের সহায়তায় ভোমরা স্থলবন্দরে টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়। এদিক দিয়ে যারা প্রবেশ করেছেন তাদের প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করার পর বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সন্দেহজনক হলেই ঘন ঘন পরীক্ষা করা হয়।
পরবর্তীতে দেশের প্রধান দুই হটস্পট ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লোকদের চিহ্নিত করতে স্থানীয়দের সহায়তা চাওয়া হয়। এটি বেশ কাজে আসে। জনগণের সহায়তায় প্রাশাসনের মাধ্যমে এ ধরনের ১১ হাজার ৭০৮ জনের আগমন নিশ্চিত হওয়া ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে স্থানীয় রাজনীতিকদের সহযোগিতা স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসনকে অনুপ্রাণিত করেছে। এছাড়া এখানে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।
বিদেশ ফেরতদের ব্যাপারে তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় প্রায় সাড়ে ৩’শ মানুষ বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আমাদের নিজস্ব চিন্তার পাশাপাশি সরকারের দিক নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রেও সবার সহযোগিতা রয়েছে। এসব কিছুর সুফল হচ্ছে এখন পর্যন্ত সাতক্ষীরায় করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়নি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে সাতক্ষীরা ফোকাস পয়েন্টে ছিল। আর তাই দিক নির্দেশনা পালনেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সব সময়। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। তারা বিদেশ ফেরত ও ঢাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতক্ষীরায় আসা লোকদের কড়া নজরদারিতে রাখতে পেরেছেন। যার সুফল সাতক্ষীরা এখন পর্যন্ত পাচ্ছে।
খুলনা বিভাগে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯৪ জন। আর মারা গেছেন ২ জন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত এ বিভাগের মধ্যে খুলনায় ১৮ জন, যশোরে ৪ জন, নড়াইলে ৩ জন, ঝিনাইদহে ৪ জন এবং কুষ্টিয়ায় ৬ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।
এ বিভাগে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৭৩৬ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৯১ জন রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। ১৯ হাজার ৫৮৩ জনকে কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। আর আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ২১৪ জনকে। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ১৫১ জনকে।
লাইটনিউজ