রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা (পিপিএস) নির্মাণ চুক্তি সই হয়েছে রাশিয়ার কোম্পানি জেএসসি এলরনের। আজ শুক্রবার রাশিয়ার কোম্পানিটির সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পাবনার রূপপুর প্রকল্পের ‘পারমাণবিক নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা সেল’র (এনএসপিসি) মধ্যে এ চুক্তিটি হয়। রাশিয়ার কোম্পানি জেএসসি এলরন ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করে দেবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত দেশের সব থেকে বড় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ অর্থ রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিচ্ছে, বাকিটা বাংলাদেশ সরকার সরকার দেবে। তবে চুক্তি হওয়া ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পিপিএস প্রকল্পটি মোট ব্যয়ের মধ্যে নেই। ফলে রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা (পিপিএস) নির্মাণ’ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পিপিএস প্রকল্পটি রূপপুর পারমাণিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশাভিত্তিক ও বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা করবে। নিরাপদ ও সুরক্ষিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, সাইবার নিরাপত্তা এবং সংবেদনশীল তথ্য ব্যবস্থাপনা এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার দুই দেশের সরকারের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার কোম্পানি এলরন এ নিরাপত্তা প্রকল্প নির্মাণের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করবে। শুক্রবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এসএসপিসি ও রাশিয়ার এলরনের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চুক্তি সই হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে পিপিএস নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। চুক্তি অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, এনএসপির প্রধান সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আখতার শহীদ, রাশিয়ার রোসাটমের মহাপরিচালক, কনস্টানটিন দেনিসভ, এলরনের মহাপরিচালক অ্যান্দ্রে মুরাভিয়েভসহ রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণে রাশিয়ার সরকারি সংস্থা রাশিয়ান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশনের (রোসাটম) সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টকে কেন্দ্র নির্মাণের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল। এ চুক্তির ওপর ভিত্তি করে গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। এ বাস্তবতায় ভারত এখন রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ, পরিচালনা, লোকবল প্রশিক্ষণ, এমনকি কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারবে।
ভিভিইআর প্রযুক্তির ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা।